শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:২৭ রাত
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] দারিদ্রের কষাঘাতে ঠিকানা হয়েছিলো এতিমখানা, আজ সেই শিহাব ভারতের আইএএস অফিসার

সালেহ্ বিপ্লব: [২] পুরো নাম মোহাম্মদ আলী শিহাব। জন্ম ১৯৮০ সালের ১৫ মার্চ, কেরালা রাজ্যের মালাপ্পুরাম জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ইদাভান্নাপপাড়া গ্রামে। দারিদ্র যে কতো নগ্ন বিভৎস হতে পারে, সেই গ্রামের মানুষ জানে। শিহাবের ঘরের অবস্থা ভালো না, সংসার চালানোর প্রয়োজনে বাবা করথ আলীর সঙ্গে সে পান ও ঝুড়ি বিক্রি করতো। ইন্ডিয়া টাইমস

[৩] তার এই কাজের মাধ্যমে সংসারে কিছুটা হলেও উপকার হচ্ছিলো, কিন্তু তাতে বাধ সাধলো হিমশীতল মৃত্যু। অনেক দিন রোগে ভুগছিলেন শিহাবের বাবা, দীনহীন দরিদ্র পরিবারের কর্তা করথ আলী। হঠাৎই চলে গেলেন ১৯৯১ সালে। ৫ ভাইবোনের মধ্যে শিহাব সবার বড়ো, তখন তার বয়স মাত্র ১১ বছর।

[৪] দুচোখে অন্ধকার দেখলো পরিবারটি। ১১ বছরের শিহাব কী করে সংসারের ভার নেবে? পিতৃহারা পাঁচটি শিশুর সব দায়দায়িত্ব এখন তাদের মা ফাতিমার। ফাতিমা লেখাপড়া জানতেন না, জানা ছিলো না কোনো কাজও। কী করে ৫টি শিশুসন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন না। উপায়ান্তর না পেয়ে বাচ্চাদের কোহিকোড শহরের এক অনাথ আশ্রমে দিয়ে এলেন। সেখানে আর কিছু হোক না হোক, পেটভরে খেতে তো পারবে।

[৫] অনাথ আশ্রমের জীবন নিয়ে অনেকে অনেক রকম ভাবতে পারেন কিংবা ভাবেনও। কিন্তু শিহাবের কাছে এই আশ্রয় ছিলো আশীর্বাদ, স্বর্গরাজ্য। এখানে ভালো ভালো খাবার খেয়ে দিন কাটানো নয় শুধু, সে খুঁজে পেলেন জীবনটাকে বদলানোর পথ। পড়ালেখাই ছিলো তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান, একনিষ্ঠতা ছিলো ভালো সব কিছু শেখার ব্যাপারে। ফলে অল্পদিনেই মেধাবী ও স্মার্ট হিসেবে অন্যদের ছাড়িয়ে গেলেন।

[৬] অনাথ আশ্রমে ১০ বছর ছিলেন শিহাব, এই পুরো এক দশক সেখানে তিনি ছিলেন তুমুল আলোচিত, দারুণ প্রশংসিত। আর তা ঘটেছিলো তার মেধা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে।

[৭] অনাথ আশ্রমে যে শৃঙ্খলায় তিনি অভ্যস্ত হয়েছেন, তা তার জীবন সাজাতে সাহায্য করেছে। ভালো নাম্বার নিয়ে মাধ্যমিক পাস করেন, এরপর একটি টিচার্স ট্রেনিং কোর্স করেন। চাকরিও পেয়ে যান সরকারি একটি স্কুলে। কিন্তু শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার আগেও পদে পদে লড়াই করতে হয়েছে জীবন-জীবিকার সাথে। কঠোর সংগ্রামের দিনগুলোতে তিনি বিভিন্ন কাজ করেছেন। কেরালা পানি কর্তৃপক্ষের পিয়ন পদে কাজ করেছেন, এমনকি একটি হোটেলে কেরাণী ও মটর অপারেটর হিসেবেও।

[৮] শিক্ষকতায় নিযুক্ত হলেন, একটু স্বস্তিকর জীবন নিশ্চিত হয়েছে, এখন তার স্বপ্ন কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিক সার্ভিসের পরীক্ষা। শিহাবের বয়স যখন ২৫, তখন থেকেই তিনি ক্যাডার সার্ভিসের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন।

[৯] ইউপিসিএস পরীক্ষায় পাসের আগে শিহাব পাঞ্জাব রাজ্য পাবলিক সার্ভিসে টিকেছেন। তারও আগে পরীক্ষা দিয়েছেন বনবিভাগ, জেল ওয়ার্ডেন, এমনকি রেলওয়ের টিকেট চেকার পদেও।

[১০] তিনবারের চেষ্টায় ২০১১ সালে তিনি ইউপিসিএস (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন) পরীক্ষায় কামিয়াব হন। অনেক মানুষই তাদের ব্যর্থতার জন্য দুর্ভাগ্যকে গালমন্দ করেন। মানুষ তার নিজস্ব মেধা দিয়ে স্পর্শ করতে পারে না, এমন কোনো কিছু পৃথিবীতে নেই।

[১১] জীবন পাল্টে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে, চোখের পলকে। তাই মানুষ যেটা করতে পারে, বড়ো কিছু হওয়ার টার্গেট ঠিক করে প্রতিদিন লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারে। আর এ কথা শিহাবের চেয়ে বেশি কে জানে?

[১২] স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিহাব বললেন, অনাথ আশ্রমের দিনগুলোতে আমি অনেক রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতাম। অন্যদের ঘুমে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্যে বেডশিটের নিচে টর্চ জ্বালিয়ে সেই আলোয় পড়তাম।

[১৩] দারিদ্রের কষাঘাতে যার এক দশক কেটেছে অনাথ আশ্রমে, ঝুড়ি বিক্রি করা সেই ছেলেটি ২০১১ সালে আইএএস (ইন্ডিয়ান এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) অফিসার হয়ে গেলেন। প্রথম দুবার পারলেন না, হতাশও হলেন না। তিনি হয়তো জানতেন, সাফল্য ধরা দেবে ঠিক সময়েই। দুবার অকৃতকার্য হওয়ার কোনো ছাপ নেই তার মাঝে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। পাস করে গেলেন তৃতীয় বারে, সারা ভারতে তার র‌্যাংকিং ছিলো ২২৬। ইংরেজি ভালো জানতেন না শিহাব, ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন অনুবাদকের সাহায্য নেন তিনি। ৩০০ নাম্বারের মধ্যে ২০১ পেলেন, হয়ে গেলেন আইএএস অফিসার। তার প্রথম পোস্টিং হলো নাগাল্যান্ডের কোহিমায়।

[১৪] ভারতে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাডার সার্ভিসে চাকরির জন্য ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন। তাদের মধ্যে হাতে গোনা কজন পাস করেন। অনেকে এক-দুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী শিহাব কঠোর পরিশ্রম ও আত্মোৎসর্গের এক অনন্য উদহারণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়