অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : ‘স্নাতক পাস ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার’Ñ এই শিরোনামটিই বাংলাদেশের শিক্ষার মান কেমন তার পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। এমনিতেই এর আগের এক রিপোর্টে জেনেছি বাংলাদেশের শিক্ষার মান দক্ষিণ এশিয়ার তলানিতে। হবে না কেন? যেই দেশের শিক্ষার বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার তলানিতে সেই দেশের শিক্ষার মান কি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে আশা করেন? রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজু আহমেদ নোয়াখালী সরকারি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে। অনার্স (সম্মান) শেষ হওয়ার পর থেকেই চাকরির জন্য চেষ্টা শুরু করেন তিনি।
২০১৮ সালে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। টানা চার বছর চেষ্টা করেও চাকরি নামের সোনার হরিণ জোটেনি রাজুর কপালে। আমার এক পরিচিতের ছেলেও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স পাশ করে অনেকদিন যাবৎ বেকার। আমি যখন হলের হাউজ টিউটর ছিলাম তখন দেখেছি হলের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পোস্টে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস (এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫) করা ছেলেও দরখাস্ত করেছে। আচ্ছা বলুনতো কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স পড়ানোর জন্য শিক্ষক ল্যাব কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের অধিকাংশ কলেজে আছে? ভালো মানের শিক্ষকতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই যথেষ্ট নেই। তার অর্থ হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা অনার্স মাস্টার্সের নামে দেশের মানুষের সঙ্গে খেলছি। এই চার বছরের অনার্স আর এক বছরের মাস্টার্স না খুলে পুরোনো দুই বছরের বিএ ও বিএসসির দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন দেখেছি বিএসসি স্যারেরা ছিলেন খুব ভালো মানের স্কুল শিক্ষক। বিএ পড়ে আমার বাবা এলএলবি করে ওকালতিতে ভালো করেছেন।
আমাদের কলেজগুলো সর্বোচ্চ দুই বছরের বিএ ও বিএসসি কোর্স পড়ানোর মতো পরিবেশ আছে। কোনো অবস্থাতেই অনার্স-মাস্টার্স নয়। একটি কলেজে অনার্স- মাস্টার্স থাকা মানে হলো এটি আসলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কল্পনা করা যায় আমরা এই সামান্য জিনিসটাই বুঝতেছি না। কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স চালু আসলে একটি ব্যবসা। একটি কলেজ প্রতি বর্ষে শত শত ছাত্র ভর্তি করে। আমার বাজিতপুর কলেজেও তাই। সারা বছর প্রায় কোনো ক্লাস হয় না বললেই চলে। তবে পরীক্ষা হয়, শিক্ষার্থীরা পাস করে কিন্তু কিছু শিখে না ফলে চাকরিও পায় না। বরং এরা যদি বিএ ও বিএসসি কোর্স পড়তো এদের সময় বাঁচতো এবং অন্তত প্রাইমারী ও মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি করতে পারতো। এই কোর্স দুটি চালু করে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের ন্যূনতম যোগ্যতা বিএ ও বিএসসি পাস করা উচিত। অযথা কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়ার নামে ছেলেমেয়েদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই সময়টা তারা এমনভাবে কাটায় যেন তারা জানে তাদের ভবিষ্যৎ নেই, তাই কোন উচ্ছাস থাকে না। অনেকেই ছাত্র রাজনীতিতে ঢুকে পরে আর কেউ ড্রাগ অ্যাডিক্টেড হয়ে পরে। আসলে এই দেশটাকে সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ দেখছি না। সবাই আছে ধান্দাবাজিতে। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার মতামত লিখুন :