আফসান চৌধুরী : ওয়াসির আহমেদের গল্পের পাঠকরা জানেন তিনি সহজ পাঠ লেখেন না। আমাদের সাহিত্যের সামাজিক বাস্তবতা প্রধান চর্চার পরিসরে, মাত্র কজনের মধ্যে তিনি, একজন যিনি এক্সিস্টেনশিয়াল ধাঁধা (enigma) বা দার্শনিক বিষয় নিয়ে লেখেন। এই জন্য আমার এতো প্রিয়। [২] ১৯৯৬ সালের দিকে আমার বন্ধু পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা সোলেমানের সঙ্গে দেখা হয়। যুদ্ধে পাকি গুলিতে তাঁর পিঠ ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিলো। অনেক চিকিৎসা করলেও পা দুইটা অচল হয়ে যায়। বাকি জীবনটা এভাবেই ছিলো। কিন্তু স্বাধীনতার ২৫ বছর পর হঠাৎ করে তার হাত দুটো অচল হতে থাকে। হুইলচেয়ারে বসা, সারাক্ষণ মুখ খারাপ করা সোলেমানের সবই বিকল জিহবা ছাড়া। যেদিন দেখা হয় আমি হতবাক হয়ে যাই তাকে দেখে। সে হো হো করে হাঁসতেই থাকে, তার মুখে সিগারেট।
[৩] সেই রাত যে কীভাবে গেছে জানি না, তবে একসময় বিজয় উৎসবের পটকার আওয়াজের মাঝে বসে বসে লিখতে শুরু করি। ইংরেজিতে লেখা আমার সারা রাতের ফসল, ‘Conversations with Suleman’, একটি দীর্ঘ কবিতা। ২০০৭ সালে ছাপা হয়, আমার মতে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কাজ। ওয়াসি’র তাই ভাবনা, সে এটা লিখেছেও কোথাও। [৪] সুলমানকে নিয়ে আমার বন্ধু ওয়াসির সঙ্গে আলাপ করি। অনেক বিষয় কথা হয়। একদিন সেও একটা গল্প লেখে ‘ খাঁচার পাখি ’ নামে। এই গল্পটি অনেক নাম করেছে এবং ছাপা হয়েছে কয়েক জায়গায়। গল্পটির অনুবাদ আমি করি। আমার মনে হয় তার গল্পের মধ্যে এটাই সবচেয়ে সহজ পাঠ, পাঠক সহজেই যেতে পারে কাছে, অসাধারণ গল্প। [৫] গল্পটি ইন্ডিয়া থেকে ১৯৭১ এর ওপর গল্পের একাধিক সংকলনে ছাপা হচ্ছে। একজন মানুষকে নিয়ে আলাদা ঘরানার দুই মানুষের সাহিত্য চর্চার নজির বোধয় বেশি নেই। সুলেমান বছর খানেক -১৯৯৭- পর মারা যায়। তাকে নিয়ে লেখা রয়ে গেলো। সে ছিলো বলে আমরা আছি। লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনার মতামত লিখুন :