আহসান হাবিব: কেউ যখন বলে ‘আমি খুব স্বাধীনচেতা’, তখন কেন যেন আমার হাসি পায়। মানে কি এর? মানে কি এরকম যে আমি আমার ইচ্ছেমত চলি, আমার ইচ্ছার বাইরে কোনোকিছু শুনি না, নাকি আমার খুব সাহস, আমি কারও ওপর নির্ভরশীল নই- এরকম কিছু? স্বাধীনচেতার শাব্দিক মানে হচ্ছে যার চিত্ত স্বাধীন। এখানে চিত্ত মানে মন নয়, চেতনা। কিন্তু আমাদের চেতনা কি স্বাধীন কোনো আলাদা সত্তা হতে পারে? পারে না। কারণ চেতনা সব সময় বস্তু সাপেক্ষ। আমি আমার চেতনা প্রাপ্ত হই আমার সমাজ সাপেক্ষে। আগে থেকেই সমাজের থাকে নানারকম নর্মস, নানা নিয়মকানুন, বাধানিষেধ। আমি না চাইলেও সেসবের অধীন হয়ে পড়ি। তারপর আমরা যখন বুঝতে শিখি, তখন সেসবের সঙ্গে আমাদের সংঘাত বাধে এবং আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো করে সাজিয়ে নিই। সমাজের প্রত্যেকের স্বাধীনতা এক এক রকম। আবার গণপরিসরে এই স্বাধীনতা রাষ্ট্রের চরিত্র কর্তৃক নির্ধারিত। কিছু মানুষ বিদ্যমান স্বাধীনতার সীমানাকে ভেঙে ফেলতে পারে।
এটা তার সংগ্রাম এবং চেতনার অংশ। একা একা নয়, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেন তার সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে। এরকম উদাহরণ ইতিহাসে প্রচুর। নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাই যখন কেউ বলে ‘আমি খুব স্বাধীনচেতা’ তখন তার কাজ দেখি আমরা। কি কাজ তিনি করেছেন যার পক্ষে এই দাবি উপযুক্ত? প্রায়ই দেখি এসব স্বাধীনচেতা মানুষ হচ্ছে সামান্য একটু জেদি, হয়তো সমাজের, পরিবারের কিছু বিধিনিষেধ অমান্য করার ক্ষমতা দেখাতে পারে, আর কিছু নয়। কিন্তু এমন কোনো কাজ বা মত প্রকাশ করতে পারে না যার প্রভাব সামাজিকভাবে পড়ে। আসলে এমন মানুষ খুব কম, কালে জন্মায়। যেমন তসলিমা নাসরিনকে বলতে পারি একজন স্বাধীনচেতা নারী । হুমায়ুন আজাদকে বলতে পারি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ যিনি অকপটে তার মতামত প্রকাশ করার সাহস রাখতেন। নিজে নয়, তখন অন্যরা তাকে ডাকবে স্বাধীনচেতা মানুষ হিসেবে। যে নিজেকে স্বাধীনচেতা দাবি করে, বুঝতে হবে তার নিজের প্রতি আস্থা কমে গেছে, জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আমাদের সে স্বাধীনচেতা মানুষ দরকার যে সমাজের কুসংস্কার এবং ক্ষমতার দম্ভ ভেঙে নির্মাণ করতে পারবে কুসংস্কারমুক্ত আরও উন্নততর মুক্ত সমাজ। লেখক : ঔপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :