সুজিৎ নন্দী: [২] তেজগাঁও রেলগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রমিকেরা কয়েকটি ট্রাক মেরামতের কাজও করছেন। কোথাও কোথাও একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি আরেকটি রাখায় রাস্তা অনেকটা সরু হয়ে এসেছে।
[৩] এটি মেয়র আনিসুল হক সড়ক। রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেললাইন পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে ডিএনসিসির সাবেক মেয়রের নামে। প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক এক সময় পুরোটাই দখল করে গড়ে উঠেছিল ট্রাকস্ট্যান্ড।সড়কটি থেকে স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে নিজের স্বপ্নের মতো সাজিয়ে ছিলেন তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। এজন্য তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
[৪] বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। ট্রাক স্টান্ডের জন্য জন্য একটি স্থায়ী জায়গা দিতে হবে। আমরা স্থায়ী সমাধান চায়। না হলে আমরা উচ্ছেদ করবো আবার দখল হবে।
[৫] প্রায় ১শ’ ফুট চওড়া এই সড়কে কখনো কখনো একসঙ্গে দু’টি যানবাহন চলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে এই স্থানে প্রায়ই লেগে থাকে যানজট। ঘটে নানারকম দুর্ঘটনা। দখল হয়েছে ফুটপাথও।
[৬] এই রাস্তা ব্যবহার করে তেজগাঁও এলাকার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাওয়া-আসা করেন। এ ছাড়া সড়কটি ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পথ।
[৭] ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের যেহেতু নিয়মিত ফোর্স নেই তাই সব সময় এটি নজরদারিতে রাখা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া সড়কটি দখলমুক্ত রাখতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা কিছুটা ভ’মিকা পালন করছে।
[৮] বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, আমরা এটা কখনোই হতে দেব না। আমরা সবাইকে বলছি সড়কের ওপর যেন কোনো ট্রাক না রাখা হয়। কেউ শুনছে। কেউ শুনছে না। শিঘ্রই এ ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
[৯] বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক ফেডারেশনের হিসাবে, এই ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজারের মতো গাড়ি স্ট্যান্ডের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা আছে। বাকিগুলো এই সড়কসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অন্য সড়কগুলোয় রাখা হয়।
[১০] ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক তেজগাঁও সড়কটি ট্রাকের দখলমুক্ত করতে গিয়ে ট্রাক শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। কিন্তু তিনি অনড় থাকায় ৬৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কটি দখলমুক্ত করা হয় মাত্র দু’দিনে। এরপর ২০১৭ সালে সাতরাস্তা থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন করে সড়ক বিভাজনে লাগানো হয় গাছ।
[১১] সড়কটি দখলমুক্ত হওয়ায় এর সুফলও পেতে শুরু করে নগরবাসী। তবে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে আবারও তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কগুলোর বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিকরা। এই পথেই ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার থেকে সাতরাস্তা হয়ে তেজগাঁও মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতনে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে তা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।