শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০২:৪৯ রাত
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০২:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খান আসাদ: সব সমাজেই ক্ষুদ্র একটি শ্রেণি চায় ক্ষমতা ও সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানা

খান আসাদ: হান্টিংটন লিখেছেন ‘ক্লাস অফ সিভিলাইজেশন’, মানে সভ্যতার সংঘাত। দুনিয়াব্যাপী যে খুনোখুনি আমেরিকানরা ও ইসলামিস্টরা করছে, সেটা ‘সভ্যতার’ দ্বন্দ্ব। তাঁর মতে, আগে, ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কালে ছিলো ‘গণতন্ত্র’ বনাম ‘কমিউনিজমের’ সংঘাত। আমেরিকা ও অগ্রসর ‘সভ্য’, ‘পশ্চিমা’, দুনিয়া ‘গণতন্ত্রের’ পক্ষে আর ‘গরিব পশ্চাদপদ’ দেশগুলো ‘কমিউনিজিমের’ পক্ষে। যেন ‘গণতন্ত্র’ ও ‘কমিউনিজম’ দুইটি ফুটবল টিম, কে বেশি ‘সভ্য’ এই জেতার প্রতিযোগিতায়। যেন ট্রফি পাওয়ার জন্য লড়ছে, মতাদর্শের কোনো ব্যাপার নেই। (জার্মান ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে লিবারেল বুর্জোয়া ও কমিউনিস্টদের জোটবদ্ধ যুদ্ধ পুরাই চেপে যাওয়া হয়েছে।)
হান্টিংটন তাঁর বইতে অবশ্য অনেক ‘সভ্যতার’ কথা বলেছেন, শুধু ‘ইসলামী’ সভ্যতা নয়। যেমন, চাইনিজ, জাপানিজ, হিন্দু, আফ্রিকান ইত্যাদি। ‘পশ্চিমা’ সভ্যতা, কিন্তু ‘ক্রিশ্চান’ সভ্যতা নয়। অপর দিকে, ভারতীয় বা আরবীয় সভ্যতা ধর্মীয় নামে, ‘হিন্দু’ ও ‘ইসলামী’ সভ্যতা। ইন্টারেস্টিং দৃষ্টিভঙ্গি না? হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম হচ্ছে ‘সভ্যতা’ বা ‘ট্র্যাডিশন’। যা ধর্মীয় মৌলবাদীরা ধার্মিকদের গেলাতে চায়। আমাদের বিখ্যাত মুসলমান পণ্ডিত তালাল আসাদ বলেনÑ ইসলাম হচ্ছে, ‘ডিস্কারসিভ ট্র্যাডিশন’। মানে ইসলাম ‘ধর্ম’ নয় ‘দ্বীন’। যা ধর্ম হিসেবে দেখা উচিত না। কারণ ধর্ম বা ‘রিলিজয়ন’ শব্দটা ‘পশ্চিমা’। হান্টিংটন কে? তিনি বুদ্ধিজীবী। নানা রাজনৈতিক বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন। যে ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় মার্কিন ফরেন পলিসির, অন্য কথায়, সামরিক কর্পোরেট পুঁজির বিশ্বআধিপত্য বা ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ ঠিক রাখার জন্য। হান্টিংটন মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যায়, সে ‘ইসলামী সভ্যতা’ নিয়ে নয়, ‘চাইনিজ সভ্যতা’ নিয়ে চিন্তিত। কেন ‘ইসলামী সভ্যতা’ নিয়ে নয়? কারণ ‘পশ্চিমা ও ইসলামী সভ্যতা’ কমিউনিজমের ভয়ে একটি এলায়েন্সে ছিলো, এখন যেহেতু কমিউনিজম আর নেই, ফলে নিজেদের পরস্পর শত্রু ভাবছে, ভুলভাবে। তবে সমস্যা হবে, যদি ‘চীনা সভ্যতা’ ‘ইসলামী সভ্যতাকে’ কাজে লাগায়, ‘পশ্চিমের’ বিরুদ্ধে।

তিনটে বিষয় বলতে চাই। [১] ধর্ম, ট্র্যাডিশন ও সভ্যতা আলাদা বিষয়। এই তিনটে বিষয়ের পার্থক্য আর করা হয় না, যদি কেউ কমনসেন্স হারায় অথবা ধান্দা থাকলে। আপনার পাশের বাড়ির করিম রহিম বা আমেনা মোমেনাকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা বাঙালির পান্তাভাতের ঐতিহ্য আর ইসলাম ধর্ম যে আলাদা বিষয় এটা বলে দেবে। কিন্তু আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টারি করেও তালাল আসাদরা আরবিয় ঐতিহ্য ও ইসলাম ধর্মের পার্থক্য জানেনা! [২] আলাদা আলাদা ‘সভ্যতা’ বলতে হান্টিংটনরা যা বোঝাতে চায়, তা মূলত বর্ণবাদ। আমরা আলাদা তাদের থেকে। আমরা একটু বেশি সভ্য। আবারও যদি ধান্দা বাদ দিয়ে কমনসেন্স দিয়ে বুঝতে চাই, তাহলে দুনিয়ার কোনো সমাজই আলাদা বা বিচ্ছিন্ন নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ একটি বিবর্তন, যে বিবর্তন ঘটেছে দুনিয়ার নানা প্রান্তে নানা সমাজে। যেমন ‘পশ্চিমা’ সভ্যতার পুস্তকাদি ছাপার ইতিহাস দেখলে তা পাওয়া যাবে ইরাক, চীন ও ভারতের ইতিহাসে। বারুদের আবিষ্কার চীনে ও ইউরেশিয়ায়। ফলে, যে কোন সমাজের বিকাশ একক বা বিচ্ছিন্নভাবে হয়নি। সংঘাত কোনো ‘সভ্যতার’ কারণে নয় সভ্যতা পরস্পরের পরিপূরক, প্রতিযোগী নয়, লেনদেনের।

[৩] তাহলে সংঘাত কিসের? কেন আমরা এত যুদ্ধ ও সহিংসতা দেখছি? এই সব সংঘাতের মূলে রয়েছে, শ্রেণীস্বার্থ। শ্রেণীসংঘাত রয়েছে ক্ষমতাবান শ্রেণীর সঙ্গে বৈষম্যর শিকার সাধারণ মানুষের, যা কখনো কখনো দৃশ্যমান নয়। আমেরিকায় যে তরুণ সৈনিক আফগানিস্তানে জীবন দিয়েছে, যা খুব করুণ, সে আমেরিকান সমাজের এলিট শ্রেণীর নয়। তার করুণ মৃত্যু মার্কিন সামরিক কর্পোরেট পুঁজির শ্রেণীস্বার্থের কারণে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আমেরিকাকে ‘গণতন্ত্র’ মনে করেন না, তিনি বলেন ‘অলিগার্কি’ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শাসন। কার্টারের ভাষায়, Oligarchy with unlimited political bribery.

সব সমাজেই ক্ষুদ্র একটি শ্রেণি চায় ক্ষমতা ও সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানা। আর সব দেশেই শ্রমজীবীশ্রেণী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও নারীরা চায় এই বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্তি। কমিউনিজম পপুলার হয়েছিল, কারণ কমিউনিজম বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে, এই অঙ্গীকার করেছিলো। বিশ্বময় বৈষম্য ও সহিংসতার বাস্তবতা বদলায়নি। এখন আমরা জানি কাঠামোগত সহিংসতা বলে একটি ব্যাপার আছে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রতিদিন এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, দারিদ্র্য ও অনাহার জিইয়ে রেখে। শুধু সমাজতন্ত্রী বা সাম্যবাদীরা নয়, পুঁজিবাদের ভেতরেও অনেক লোক এই বাস্তবতা বোঝেন। অবস্থা বদলাতে চান, যদিও পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল রেখেই, যা ভ্রান্তিবিলাস। সমাজ বিবর্তন ইতিহাসের অমোঘ নিয়তি। ‘The Keynes Solution: The Path to Global Economic Prosperit Õ| wj‡L‡Qb Paul Davidson. (জ্বর কমছে, তাই সরল কিছু পড়ার চেষ্টা করছি।) মুক্তবাজার ওয়াজকারীদের ধুয়ে দিয়েছেন, কেইন্সের এই শিষ্য, যা বেশ উপভোগ করছি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়