ডেস্ক নিউজ: কক্সবাজারে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বেশিরভাগই আকর্ষণীয় ও দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতে চায়। এ কারণে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে লাখ লাখ ভ্রমণপিপাসুরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে থাকেন। তবে সেন্টমার্টিনের জেটি বিধ্বস্ত হওয়ায় এ বছর সেখানে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পর্যটনশিল্প ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। কক্সবাজার এলেই তারা ছুটে যান প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে। কিন্তু মৌসুম শুরুর আগেই জেটি ভেঙে যাওয়ায় পর্যটকদের আসা-যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এতে হয়তো ভ্রমণপিপাসুরা সেন্টমার্টিন যাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
তারা বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের ভ্রমণের আরাধ্য স্থান প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পূর্বের মতো পর্যটক আনা-নেওয়া করতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ নামানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। যুগান্তর অনলাইন
সেন্টমার্টিন নৌরুটে চালানো একাধিক জাহাজের পরিচালক পর্যটন উদ্যোক্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, গেল কয়েক বছরে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়- জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে সেন্টমার্টিন জেটির অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পন্টুন। সর্বশেষ গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেটিটি আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে গেছে জেটির পাশে ট্রলার ভিড়ানোর অংশটিও। যে কারণে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জেটি।
তিনি বলেন, দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছেন। তাই মৌসুমের সময়টাতেই ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু জেটির বেহাল দশার কারণে বিনিয়োগকারীরা আজ দিশাহারা। এতে পর্যটন খাতে জড়িত অন্তত অর্ধলাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারে ৮-১০টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, শতাধিক মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ ট্যুরিস্ট গাইড এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সেন্টমার্টিনকে ঘিরে পরিচালিত হয়।
এ ছাড়া সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের জন্য দ্বীপে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস। রয়েছে শতাধিক রেস্তোরাঁ। শীত মৌসুমে দ্বীপবাসীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীর একমাত্র আয়ের উৎস পর্যটন। তাই পর্যটনকে পুঁজি করে প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জেটি সংস্কার করা না গেলে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে এখাতে সম্পৃক্ত প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, জেটি নষ্ট হওয়ায় দ্বীপের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে যাওয়া কঠিন। দ্বীপবাসী তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য আনা-নেওয়া করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারি কাজগুলো করা না গেলেও রহস্যজনক কারণে বেসরকারি স্থাপনা ঠিকই গড়ে উঠছে দ্বীপে। অথচ এখানে নৌ-বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা দপ্তর এখানে কাজ করে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, সেন্টমার্টিনের জেটিটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন। এটি প্রতি অর্থবছরে নিলামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়। চলতি ১৪২৮ বঙ্গাব্দেও এটি নিলাম হয়েছে এক কোটি ২২ হাজার টাকায়। এর আগে ৭০-৮০-৯০ লাখ এভাবে নিলাম হয়েছে।
জেটিটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। অথচ এটি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হলেও আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন জেটি স্থাপনে হাত দিতে পারছি না। এর পরও ৪২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে জেটি সংস্কারের অনুমতি চেয়ে চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। নির্দেশনা এলে দ্রুত সংস্কারে হাত দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সেন্টমার্টিনে একটি অত্যাধুনিক জেটি নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নেব। এ সংক্রান্ত যতেষ্ঠ ফান্ড আমাদের হাতে আছে।
আপনার মতামত লিখুন :