নিউজ ডেস্ক : চার শতাধিক বাবুই পাখির জন্য একজন কৃষকের ভালোবাসা মুগ্ধ করেছে সবাইকে। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার রামপুর গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক মো. রিপন মিয়া পাখিদের প্রতি এই ভালোবাসা দেখান। রামপুর গ্রামের মূল সড়কের পাশে একটি উঁচু তালগাছ।
সম্প্রতি গাছের মালিক তজু মিয়া সেটি বেপারির কাছে বিক্রি করে দেন। গাছের পাশেই রিপন মিয়ার ধানের জমি। বিষয়টি তার নজরে পড়ে। তিনি খেয়াল করেন গাছটি বেপারি কেটে নিয়ে যাবে। এতে নষ্ট হবে পাঁচ শতাধিক পাখির আবাস। তালগাছটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরও ২০০ টাকা বেশি দিয়ে সেটি কিনে নেন। যত দিন গাছে পাখি থাকবে তিনি তত দিন সেটি বিক্রি বা কাটবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার পার হয়ে যেতে হয় সদর উপজেলার বলেশ্বর। তার পরের গ্রাম রামপুর।
দেখা গেছে, রামপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে সুন্দর সড়কটি গিয়ে মিলেছে তৈলকুপি বাজারে। রামপুর গ্রামের সড়কের পাশে তালগাছটি। গাছ আর পাখি দেখতে এখানে ভরাসারে অবস্থিত সোনার বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় তরুণরা ভিড় করে।
স্থানীয়রা জানান, রামপুর গ্রামের মূল সড়কের পাশে একটি বড় তালগাছ রয়েছে। গাছের মাথায় পাতায় পাতায় দুই শতাধিক বাসা তৈরি করেছে বাবুই পাখি। সম্প্রতি গাছের মালিক গাছটি বিক্রি করে দেন। গাছের পাশেই রিপন মিয়ার ধানের জমি। রিপন খেয়াল করেন গাছটি ব্যাপারি কেটে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতে নষ্ট হবে প্রায় চারশ পাখির আবাস। পরে তাল গাছটি তিনি কিনে নেন। এছাড়াও যত দিন গাছে পাখি থাকবে তিনি ততদিন সেটি বিক্রি বা কাটবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।
কৃষক মো. রিপন মিয়া বলেন, জমিতে ফসল ফলানো আর বাড়িতে গরু পালন তার মূল পেশা। জমির পাশের তাল গাছটিতে অনেক বাবুই পাখি কিচিরমিচির শব্দ তুলে ডাকে। গাছের কাছে এসে পাখির শৈল্পিক বাসা বুনন আর ডাক শুনলে তার মন ভালো হয়ে যায়। তাদের গ্রামে এ রকম বাবুই পাখির বাসা বাঁধা তাল গাছ আর নেই। তাই তিনি গাছটি কিনে নেন।
স্থানীয় সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, পাখির প্রতি যত্নের বিষয়ে আমরা অনেক উদাসীন। সেখানে একজন কৃষক পাখির প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন সেটি বিরল। তার নিকট আমাদের অনেক শেখার আছে। তার মতো অন্যদেরও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।
সামাজিক বন বিভাগের কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, দিন দিন পরিবেশ থেকে বৃক্ষ, পাখি ও বিভিন্ন প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো সংরক্ষণের বিকল্প নেই। কৃষক রিপন মিয়ার এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, সারাবিশ্বে ১১৭ প্রকার বাবুই পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মেলে। যদিও এই তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা পাওয়াও এখন দুষ্কর। পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচার শিকার ইত্যাদি কারণে সুন্দর এই পাখি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাবুই পাখির প্রতি রিপন মিয়ার মমত্ববোধ বড় মানসিকতা পরিচয় বহন করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তালগাছ, নারকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছে ঝুলিয়ে বাসা তৈরি করে ‘দেশি বাবুই’ (Baye Weaver)। বরিশাল অঞ্চলে সাধারণত দেশি বাবুইয়ের বাস।
বন বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশি বাবুইকে প্রায়ই ফসলে ক্ষেতে দেখা যায়, অনেকে ধারণা করেন পাখিটি ফসল খায়। কিছু ফসল হয়তো খায়ও। কিন্তু ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ই তার প্রধান খাদ্য। তাই প্রকৃতপক্ষে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে উপকার অনেক বেশি করে।
প্রকৃতির সুন্দর এই পাখিটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।