শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৪:৪১ সকাল
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৪:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাজেট বাস্তবায়নে পরিকল্পনার তাগিদ

কালের কণ্ঠ: প্রতি অর্থবছরই বাজেটের আকার বাড়ে। দেওয়া হয় বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, কিন্তু অর্থবছর শেষও হয় বিশাল ঘাটতি নিয়ে। সেদিক থেকে আয় ও ব্যয়ের পার্থক্যে ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। এতে অপরিকল্পিত ঋণের বোঝা নিতে হচ্ছে। বাড়ছে সুদ ব্যয়। আর এগুলোর জন্য দায়ী রাজস্ব আহরণ এবং অর্থ ব্যয়ের সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা না থাকা। সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আগাম কোনো পরিকল্পনাই নেই। খোদ অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো স্বীকার করেছে। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে ২৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পাঁচ পাতার একটি পরিপত্র পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রেই বিষয়গুলো স্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এখন থেকে সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগাম পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। এই পরিকল্পনার আলোকে বাস্তবায়ন অগ্রগতি মনিটর করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়গুলোকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিকল্পনা পাঠাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর পরিকল্পনা এবং বাজেট বাস্তবায়ন যাতে সঠিকভাবে হয় সে জন্য মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর। কমিটি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাবে।

এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিকল্পনার আলোকে কাজ করা গেলে অপরিকল্পিত ঋণ ও ঋণজনিত ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হারও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে এত দিন কেন বাজেট বাস্তবায়নে আগাম কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই কর্মকর্তা।

সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পরিপত্রে বলা হয়েছে, সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কম্পিউটারভিত্তিক মাল্টিমডিউল ডাটাবেইস আইবাস++ চালু করা হয়েছে। এ জন্য এসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে। তার পরও অর্থবছর শেষ হয়ে যায়, কিন্তু বাজেটে ঘোষিত কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন থাকে। অর্থবছরের শুরুর দিকে রাজস্ব আহরণে ধীরগতি থাকে। ব্যয়ের চাপও কম থাকে, কিন্তু এ দৃশ্য বদলে যায় অর্থবছরের শেষের দিকে। তখন ব্যাপক আকারে ব্যয়ের চাপ বাড়ে। এতে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ফলে বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার নিতে হয়। আর এ কারণে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।

চলতি অর্থবছর সরকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু বরাবরের মতো এবারও রাজস্ব আদায়ে হতাশাজনক চিত্র দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩ হাজার ৮৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম মাসেই সাত হাজার ২২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ৭৫৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৬.২৪ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। রাজস্ব আহরণের এ চিত্রের কারণে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল হতাশাজনক। গত অর্থবছর বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে গত আট অর্থবছরে অপরিকল্পিত ঋণের কারণে সুদ ব্যয় বেড়েছে প্রায় আট গুণ।

অর্থ মন্ত্রণালয় তাই বাধ্য হয়ে ২৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বাজেট বাস্তবায়নের আগাম পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে অর্থবছরের শুরুতেই একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যথাযথভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়ন নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করতে হবে।

গত এক দশকে বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র : সরকারি হিসাবেই গত ১০ বছরের বাজেট বাস্তবায়নের হার গড়ে ৭০ শতাংশের কম হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৭.০৬ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৩.১৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯০.৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪.৫৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮১.৫৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই হার ছিল ৭৮.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেটা কমে হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ৮৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার প্রভাবে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে ৭০ শতাংশের কম। আর গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৪ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়