মাজহারুল ইসলাম: [২] মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে প্রায় ২ দশকের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর সেখানকার দরিদ্র যুবকদের চাকরির প্রতিশ্রুতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সফলতাও অর্জন করেছে তালেবানরা।
[৩] ১৯৯৬ সালে এর আগের দফায় ক্ষমতা দখলে পর শরীয়াহ আইন জারির মাধ্যমে টেলিভিশন দেখা, গান শোনা ও নারী শিক্ষার মতো কার্যক্রমের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তালেবান।
[৪] জাপানের গণমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিন্তু এর পর থেকে এই গোষ্ঠী ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করে অন্তত কিছু উপায়ে নিজেদের আধুনিক যুগের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।
[৫] কাবুলের ২০ বছর বয়সী এক তালেবান যোদ্ধা বলেন, আমরা ভোর ৫টায় উঠে একসঙ্গে নামাজ পড়ি ও কোরআন তিলওয়াত করি। এরপর সকালের খাবার খেয়ে ৭টায় কাজ শুরু করি। আমরা স্মার্টফোনও ব্যবহার করি। কাবুলে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করা ওই তালেবান যোদ্ধা জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পর তিনি তার ফোনে খবর দেখেন। কলও করেন। কিন্তু কোনো সিনেমা কিংবা বিনোদনমূলক কিছু দেখেন না।
[৬] ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তালেবান গোষ্ঠীতে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার পুরুষ যোদ্ধা আছে বলে মনে করা হয়। শেষবার ক্ষমতায় থাকাকালীন অবকাঠামোগত অভাবের কারণে এই গোষ্ঠীর হাতে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। এখন তাদের সদস্যদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয় এবং তারা টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করেন।
[৭] দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর গত ১৭ আগস্ট একজন তালেবান মুখপাত্র যখন প্রেসের সামনে আসেন, তখন তার সমর্থকদের অনেককে স্মার্টফোনে সেলফি তুলতে দেখা যায়।
[৮] তালেবান নেতারা এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, অনলাইন ছাড়া তারা 'ইন্টারনেট প্রজন্মের' মন রক্ষা করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগিতায় হেরেও যেতে পারেন। যদিও বিশ্বাস করা হয় গান, চলচ্চিত্রসহ ইন্টারনেট নির্ভর অন্যান্য বিনোদন নিষিদ্ধই থাকবে।
[৯] আর অনেক তরুণ তালেবান যোদ্ধার চূড়ান্ত আবেদন হলো চাকরির প্রতিশ্রæতি। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন অবস্থানের সময় আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বন্যা বয়ে গেলেও সেখানকার অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। ২০১৯ সালে করা এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক জরিপে, ৭০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা চাকরির সুযোগের অভাবকে যুব সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন।
[১০] তালেবান গোষ্ঠী মনে করে, মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা ব্যবহার করে দরিদ্র যুবকদের জন্য কাজের ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা কম।
[১১] কাবুলে পরবর্তী মিশনের জন্য অপেক্ষারত ২০ বছরের কিছু বেশি বয়সী এক তালেবান যোদ্ধা বলেন, আমি মাসে ১০ হাজার আফগানী (১১৮ ডলার) আয় করি। যা সত্যিই যথেষ্ট না।
আপনার মতামত লিখুন :