সুমন্ত আসলাম: জুতা ছিলো না আমাদের, তবে স্যান্ডেল ছিলো। দুই ফিতার সেই স্যান্ডেল পরে স্কুলে যেতাম আমরা। কোনো কোনো দিন খালি পায়েও। বছরে আমরা একবারই নতুন জামা পেতামÑ রোজার ঈদে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে একটা প্যান্টও। ওগুলোই আমাদের স্কুল ড্রেস ছিলো, আমাদের সারা বছরের সব উৎসবের পোশাক। আমাদের প্যান্ট-জামা ইস্ত্রি হতো না কখনো, ৫৭০ সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতো মা, বাঁশের আড়ে শুকানোর পর কুঁচকে থাকত শতো ভাজে, আমরা ওই মানচিত্র সদৃশ জামা পরেই স্কুলে যেতাম। [২] স্কুলে আমরা অপেক্ষাকৃত বেশি দিন ছুটি পেতাম রোজায় আর বার্ষিক পরীক্ষার পর। স্কুল খোলার আগের দিন আমাদের সে কী উত্তেজনা, অপরিসীম আনন্দ, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস! পুরনো ক্যালেন্ডারে পুরনো বই মুড়িয়ে আমাদের স্কুল যাত্রা। পথের ধুলো সঙ্গী হতো, শুকনো পাতারা কোরাস করতো মচমচিয়ে, রাস্তার কুকুরগুলো অলস চোখে তাকিয়ে দেখতোÑ পাড়ার দুষ্টু ছেলেগুলোকে। তারপর স্কুলে গিয়েই কাঠের হাই বেঞ্চে বইগুলো রেখে মাঠে ছুট, সেখানে লকলকে দুর্বা ঘাস অপেক্ষায় আছে পায়ে জড়ানোর জন্য, আর পাকুর গাছের ডালটা নুয়ে আছে অভিবাদনে এই, এই তোরা আয় না আমার বুকে।
[৩] ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলবে, দেড় বছর পর। কথাটা শুনে সদ্য টিন- এ পা দেওয়া আমার মেয়েটা মাকে আনন্দ- চিৎকারে বললো, ‘মা, আমার স্কুল ড্রেসটা ঠিক আছে তো, স্কুল ব্যাগটা!’ সোনার গয়না আর টাকা ভর্তি ব্যাগের চেয়ে যত্ন করে রাখা মেয়ের মা ওগুলো বের করলো কেবিনেট থেকে- পরিপাটি, সুগন্ধে ছাওয়া, ঝকঝকে। বহুদিন পর মায়ের সেই মুখটা ভেসে উঠলোÑ মায়েরা প্রতিদিনের কাজে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যান নিজে, কিন্তু সন্তানের প্রতিটি জিনিস রাখেন যত্নে, পরম ভালোবাসায়, এমনকি ফিতে ছিঁড়ে যাওয়া জুতোটাও। আমার মেয়েটা তার স্কুল ড্রেসের দিকে তাকিয়ে আছে, মা তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে, আর আমি তাকিয়ে আছি দুজনের দিকে- ছয়টি চোখেই মুগ্ধতা, মমতা ছুঁয়ে আছে যার পরশে। [৪] স্কুল খুলছে! মেয়েটা ছুটি শেষে বাসায় আসবে! কতোদিন মেয়ের ঘেমে যাওয়া আভা মুখটা দেখি না, যেখানে স্বপ্ন খেলা করে নিত্য, মানুষ হওয়ার প্রত্যায়, আর ছন্দও। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :