বাবুল আক্তার: [২] যশোরের চৌগাছায় সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় প্রায় ২ হাজার জন মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধ শাতাধিক ভোটার জীবিত বলে দাবি করছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে ইতোমধ্যে ২৪ জন ভোটার জীবিত দাবি করে আবেদেন করেছেন। আবেদকৃতদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচ অফিসের সুপারিশে ১৯ জন ভোটার আবার জীবত হয়েছেন। বাকি ৫জন প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন।
[৩] ভুক্তভোগীরা জানায়, তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধনকারীদের ভুলে এতো দিন তারা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা সত্ত্বেও সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন।
[৪] নতুন করে ভোটার তালিকায় জীবিতরা হলেন- ফুলসারা ইউনিয়নের আফরা গ্রামের হামিদা বেগম, পাশাপোল ইউনিয়নের পলুয়া গ্রামের ইমান আলী। নারায়নপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামের আয়ুব হোসেন ও দাউদ হোসেন, একই ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মৃধা ও পেটভরা গ্রামের কায়েম আলী বিশ্বাস। স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা গ্রামের জামেনা খাতুন, গদাধরপুরের আম্বিয়া খাতুন ও বাজে খড়িঞ্চা গ্রামের মফিজ উদ্দীন। চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাকপাড়া আব্দুল মান্নান শেখ, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইছাপুরের নুরুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কারিগরপাড়ার হাবিবুর রহমান ও মালোপাড়ার আন্না রানী। পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের ওসমান সরদার, মুক্তদহ গ্রামের হাফিজুর রহমান, নিয়ামতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও পাতিবিলা গ্রামের ইছাহক মিয়া। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়ার আব্দুল করিম ও রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহানুর মন্ডল।
[৫] জীবিত হওয়ার জন্য যে ৫ জন নতুন করে আবেদন করেছেন তারা হলেন- সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরের খদেজা বেগম, হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুরের সাফিয়া বেগম, পাশাপোল ইউনিয়নের পাশাপোল গ্রামের নাজমা বেগম, নারায়ণপুররে বুন্দুলিতলার হানিফ আলী এবং ফুলশারা ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের ইমদাদুল হক।
[৬] আবেদনকারী রামকৃষ্ণপুর গ্রামের খদেজা বেগম জানায়, টিকার নিবন্ধন করতে গিয়ে জানতে পারে সে মৃত। জীবিত প্রমাণ করতে আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোনো কিনারা পাচ্ছিল না বলে জানান।
[৭] সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অফিসে শেষ বারের জন্য আবেদন করেন তারা। ‘আবেদকারি ভোটাররা সকলেই জীবিত আছেন’ মর্মে বিশেষ সুপারিশ করে গত ৭ জুন উপজেলা নির্বাচন অফিস আবেদনগুলো নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবর পাঠায়। এরপর তাদের তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে জীবিত দেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচ কর্মকর্তা।
[৮] মুক্তদহ গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জীবিত’ হতে পেরে ভালো লাগছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকে নিজ নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে তারা বলেন, আপনার আইডি কার্ড নকল। আমি চ্যালেঞ্জ করে অন্য কম্পিউটারে চেক করি। সেখানেও বলেন, এই কার্ডের কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে কম্পিউটারে চেক করে বলেন ‘এই ব্যক্তি মৃত’। আমি বলি, কীভাবে মৃত হলাম? আমিই তো হাফিজুর। তাঁরা আমাকে বলেন, চেয়ারম্যানের সনদসহ কাগজপত্র জমা দিতে বলেন।
[৯] পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান শেখ বলেন, ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকায় দেখি আমার নাম নেই। তবে ভোট দিয়েছিলাম, সমস্যা হয়নি। ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখি আমি ‘মৃত’! তিনি বলেন, সেই থেকেই সুবিধা বঞ্চিত ছিলেন তিনি। জীবিত হওয়ার জন্য ঘুরেছেন বছরের পর বছর।
[১০] উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, নতুন আবেদন কারীদের নাম তালিকায় পুনঃ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইসি সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠানো হবে। উপজেলায় ভোটার তালিকায় ১৯ জন ‘মৃত’ দেখানো ব্যক্তির তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। তারা আগের আইডি কার্ডেই এখন সরকারি সকল সেবা নিতে পারবেন। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :