শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:১৭ দুপুর
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:১৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মসজিদে পালনীয় কতিপয় শিষ্টাচার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান: মসজিদ আল্লাহর ঘর। পৃথিবীতে সবথেকে পবিত্রতম স্থান। সেখানে মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজের জন্য মিলিত হয়। একজন মুমিন মুসলমান এই পবিত্র ঘরের আদব অবশ্যই রক্ষা করে। সে অন্যকেও তা মানতে উৎসাহিত করে। কারণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে ইবাদত করলে সে ইবাদতের মর্যাদা অনেক বেশি হয়। তাই মসজিদে ইবাদত তথা জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য আমলের জন্য কতিপয় শিষ্টাচার অবশ্যই মানা উচিত।

প্রবেশ ও বের হওয়া সময়
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। কারণ নবী করিম (সা.) সব কাজ ডানদিক থেকে করা পছন্দ করতেন। আবার মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে বের হতে হবে। কারণ নবী করিম (সা.) সবসময় এভাবেই করতেন।

যে দোয়া পড়তে হবে
মসজিদে প্রবেশের সময় ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আব ওয়াবা রাহমাতিক ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও এই দোয়া পড়া। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আবার ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা মিন ফাজলিক অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি এই দোয়া পড়া।

অযথা তাড়াহুড়ো না করা
ধীরস্থিরভাবে নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নাত। হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, একদা আমরা নবী করিম (সা.) এঁর সাথে নামাজ আদায় করছিলাম, এমন সময় লোকজনের শোরগোল শোনা গেল। নামাজ শেষে নবী করিম (সা.) বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, নামাজের জন্য আমরা তাড়াহুড়ো করছিলাম। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, এমন করো না। যখন নামাজে আসবে, শান্তভাবে আসবে। যা পাবে তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যাবে তা পূরণ করবে।’ (বোখারি)।

নামাজির সামনে সুতরা স্থাপন
মসজিদে নামাজ আদায়কালে সামনে কিছু না থাকলে প্রয়োজনবোধে অবশ্যই সুতরা দিতে হবে। কারণ মসজিদে যে-কোনো সময় লোকজন নামাজের আসতে পারে। আবার কারো বের হবার প্রয়োজনও হতে পারে। কেউ নামাজ আদায়কালে তার সামনে সুতরা থাকা বা সুতরা দেওয়া ব্যতিরিকে তার সামনে দিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো কিছুর সামনে নামাজ আদায় করে, যা লোকদের আড় করে, অতঃপর কেউ যখন সেই নামাজি ও আড়কারী বস্তুর মাঝ দিয়ে যেতে চায়, তখন সে যেন তাকে বাধা প্রদান করে। আর যদি সে না মানে, তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে, কারণ সে শয়তান। (বোখারি)।

তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়
মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করে এরপর বসতে হবে। কেননা এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, যতক্ষণ না সে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তখন পর্যন্ত সে যেন না বসে ।’ (বোখারি)।

মসজিদ থেকে বের না হওয়া
মসজিদে থাকা অবস্থায় আজান হওয়ার পর জরুরি কোনো কারণ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। হজরত আবু শাশা (রহ.) বলেছেন, আমরা সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এঁর সাথে মসজিদে বসাছিলাম। এমন সময় মুয়াজ্জিন আজান দিলেন। তারপর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো। আর বেরিয়ে যেতে লাগল। তখন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) তাঁর দিকে চেয়ে থাকলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মসজিদ থেকে বের হলো। তারপর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘এ ব্যক্তি আবুল কাসিম তথা নবী মুহাম্মদ (সা.) এঁর অমান্য করল। (মুসলিম)।

দুর্গন্ধ দূর করা

দেখা যায় অনেক মুসল্লী মসজিদে এমন অবস্থায় নামাজ পড়তে যায় তার মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ আসে। এমনটি করা কখনো উচিত নয়, বরং মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তা দূর করতে হবে। আর এই কারণেই নামাজের আগে মেসওয়াত করার অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে এর দ্বারা মানুষ যেমন কষ্ট পায় ফেরেশতারাও কষ্ট পান। তাই মসজিদে যাবার আগে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। এমন কোনো কিছু খাওয়া যাবে না, যা খেলে মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়। আর অন্যেরা এর দ্বারা কষ্ট পায়।

মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ
আল্লাহ ঘর মসজিদকে মহব্বত করে এর জিনিসপত্র হেফাজত করতে হবে। একে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন,‘আমার কাছে আমার উম্মতের নেক আমল ও বদ আমল পেশ করা হয়। নেক আমলের মধ্যে আমি পেলাম রাস্তা থেকে সরানো কষ্টদায়ক বস্তু। আর বদ আমলের মধ্যে পেলাম নাকের আবর্জনা, যা দেখেও মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা হয় না।’

অন্যের ইবাদতে সমস্যা সৃষ্টি না করা
মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, হাসি-তামাশা, জোরে আওয়াজ করা বা উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করা যে কারণে মসজিদে আগত মুসল্লীদের নামাজ, জিকির-আজকার বা দ্বীনি শিক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি তা কখনোই করা যাবে না। রাসূল (সা.) এঁর সাহাবি হজরত সায়িব বিন ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত বোখারি শরিফের এক হাদিসে হজরত উমর (রা.) এঁর বক্তব্যে তা প্রমাণিত। নাসায়ী শরিফের এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই তার প্রভুর সাথে সংগোপনে আলাপকারী, কেউ যেন তাই অন্যকে কষ্ট না দেয়। আর তেলাওয়াতকালে একে অপরের ওপর আওয়াজ উঁচু করে।’

নামাজের সময় কাতার সোজা করা
নামাজের সময় লাইন সোজা করা ও লাইনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। নবী করিম (সা.) নিজে লাইন সোজা করতেন আর বলতেন, 'বরাবর হও, ভিন্ন ভিন্ন হইও না; তাহলে আল্লাহ তোমাদের অন্তরকে ভিন্ন ভিন্ন করে দেবেন। বড় ও জ্ঞানীরা যেন আমার কাছে থাকে।’ (মুসলিম)। তাই লাইনগুলো অবশ্যই সোজা করতে হবে। কারণ লাইন সোজা হওয়া পরিপূর্ণ নামাজের পরিচয়।

মসজিদ আল্লাহর ঘর, তাই যা কিছু চাইতে হবে সবই আল্লাহর কাছে। এই ঘরের সম্মানে ও আদব রক্ষায় অপ্রয়োজনীয় সবধরণের আলাপ-আলোচনা পরিহার করতে হবে। এমনকি কোনো ধরণের ক্রয়-বিক্রয় ও হারানো বস্তুও নামাজের সময় খোঁজা উচিত নয়। যদি এধরণের প্রয়োজনও থেকে থাকে তা নামাজ শেষে করতে হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়