অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : উগান্ডা নিয়ে আমরা ট্রল করি। সেই উগান্ডার একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যার জন্ম ১৯৭০ সালে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক বয়স। সেই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম মাকেরেরে ইউনিভার্সিটি (Makerere University)! টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে অনুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং হলো ৪০১-৫০০ এর মধ্যে। এটি আসলে ১৯২২ সালে একটা টেকনিকাল ইনস্টিটিউট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালে এটি ইউনিভার্সিটি কলেজ এবং ১৯৭০ সালে পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। What a journey it made. নিয়মিতভাবে এর উন্নতি ঘটে। একটা টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ৪০১-৫০০ অবস্থানে নিয়ে আসে। আর আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? ১৯২১ সালে জন্ম নেওয়ার পর যুগান্তকারী সাফল্য দেখায়। তারপর ১৯৪৫ এর পর থেকে কেবল নিচেই নামছে। এমনকি ২০১১-১২ সালেও ছঝ ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৫০১। আর গত ১০ বছরে কি এমন ঘটে গেলো যে র্যাংকিং নেমে এখন ১০০০+ এ পৌঁছেছে? লজ্জায় মাথা কাটা যায় যখন বলে দেশ নাকি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। আর এইদিকে সেই জোয়ারে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেসে যাচ্ছে সেই দিকে কারো দৃষ্টি আছে?
সম্প্রতি রউফুল আলমের এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানলাম, ২০১৯-২০ সালে শুধু সেই ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের জন্য আট মিলিয়ন ইউএস ডলার অনুদান দেয় উগান্ডা সরকার। যেটা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৫ কোটি টাকার সমান। আর আমার বাংলাদেশ কি করেছে? প্রায় ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২১/২২ অর্থ বছরের জন্য গবেষণা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ১০০ কোটি টাকা । আর গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি টাকা।Ridiculous! Shame!
উগান্ডা, রুয়ান্ডা সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাই কেবল পেছাচ্ছি। রুয়ান্ডার কিগালি শহর এখন আফ্রিকার সবচেয়ে পরিষ্কার শহর। রুয়ান্ডায় এখন থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে ইতালির ICTP ও ইউনেস্কোর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইনস্টিটিউট আছে। আর আমরা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো আগে অবকাঠামো নির্মাণ করছি। অথচ উচিত ছিল আগে শিক্ষায় মেগা প্রকল্প নিয়ে দেশের মানুষকে মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করা। তাহলে এতোদিনে আমরা একটা শিক্ষিত জাতি এবং শিক্ষিত নেতৃত্ব পেতাম। আগে অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে আমরা পেলাম দুর্নীতিবাজ আর অসৎ মানুষে ভরা একটি দেশ। এই অসৎ আর দুর্নীতিবাজ মানুষ দিয়ে আর যাইহোক উন্নত জাতি হওয়া সম্ভব না। ঢাবিয়ান ঢাবিয়ান করে গর্বে মাটিতে পা পরে না। অথচ এইটা তলিয়ে যাচ্ছে সেইটাকে উঠানোর দায়িত্ব কেউ নেয় না দাবিও জানায় না। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :