আহসান হাবিব: আমাদের শৈশবের পরীক্ষাগুলোর দিনগুলোতে আমাদের মায়েরা ডিম খেতে দিতো না। কারণ তারা মনে করতো ডিম খেতে দিলে আমরা পরীক্ষায় শূণ্য পাবো। এমন কেন মনে করতো তারা? কারণটা সহজ। ডিমের আকার যেহেতু শূণ্যের মতো, তাই পরীক্ষার খাতায় যাতে আমরা শূন্য না পাই অর্থাৎ ফেল না করি- এই ছিলো তাদের চাওয়া। ইতিবাচক চাওয়া। এটা একটা ট্যাবু যা আদিম মানুষের কাছ থেকে এসেছে। এই ট্যাবু যাদুর অন্তর্গত। এটা একটা ইতিবাচক যাদু। ইতিবাচক মানে এর ফল যাতে নেতিবাচক না হয়, তার জন্য একটি কাজ থেকে বিরত থাকা। এটা বস্তুর আকারগত সাদৃশ্য থেকে জন্ম নিয়েছে। ট্যাবু আদিম মানুষের বিশ্বাসের অন্তর্গত। আধুনিক কালেও এইসব অসংখ্য ট্যাবুর প্রচলন আছে। এটা বলা যায় আমাদের সামাজিক জিনগত বৈশিষ্ট্য যা আমরা বহন করে চলেছি।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি: আমরা যাদের ঘৃণা করি- জাতীয় জীবনে প্রধানত- তাদের একটা কুশপুত্তলি গড়ি এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দিই। এই আগুন লাগানোর মাধ্যমে আমরা মনে করি যে লোকটি নিশ্চয়ই আগুনের জ্বালায় নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে কিংবা যখন সে শুনবে এই ঘটনা, সে অপমানিত হবে, মানসিক কষ্ট অনুভব করবে। এটা একটা যাদু যার মধ্য দিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করা হয় এবং মনে শান্তি আসে। স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজার তার সুবিখ্যাত বই ‘গোল্ডেন বাউ’ এ এই যাদুর নাম দিয়েছেন ‘সমমর্মিতার যাদু বা অনুকরণের যাদু’। এতে মনে করা হয় যেহেতু কুশপুত্তলি ঘৃণিত মানুষের চেহারার আদলে নির্মাণ করা হয়, সূতরাং আগুনে পুড়ে লোকটি নিশ্চয় কষ্ট পাচ্ছে। ডিম না খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা হয়তো এখন আর ততোটা চর্চায় নেই, কিন্তু কুশপুত্তলিকা দাহ এখনো হরহামেশাই দেখতে পাই। লেখক : ঔপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :