শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট, ২০২১, ০২:২৫ রাত
আপডেট : ২৭ আগস্ট, ২০২১, ০২:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আর রাজী: মার্কিনিদের জন্য গভীর বেদনাবোধ করিতেছি

আর রাজী: আমেরিকা মহাদেশের অনেকগুলো রাষ্ট্র এক হইয়া এমন এক যুক্তরাষ্ট্র গড়িয়ে তুলিয়াছে যাহা প্রাকৃতিকভাবেই অমিত সম্পদের ভাণ্ডার। প্রকৃতি তাহাদের উদার হস্তে সম্ভাব্য সকল কিছুই দান করিয়াছে। তাহাদের মাটি যেমন সোনা ফলা তেমনি তাহার গর্ভ বিপুল রত্নরাজিতে পরিপূর্ণ। এই দেশের কিছুরই অভাব নাই। কেবল ঘরের খাইয়া চলিলেও বহু বছর ধরিয়া বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ রূপে প্রতিষ্ঠিত থাকিতে তাহাদের বিশেষ বেগ পাইবার কথা নহে। কিন্তু ধনী ব্যক্তির যেই রূপ আত্মঅহমিকা ও আত্মবিকার থাকে তাহাদেরও সেইরূপ প্রগাঢ় অহমিকা ও বিকার রহিয়াছে। সেই আত্মঅহমিকার বলে ও বিকারের কারণে তাহাদের এমত ধারণা হইয়া থাকিবে যে, বিশ্বের সকল কিছুতেই তাহারা শ্রেষ্ঠ আর এই শ্রেষ্ঠত্বের বিভা বিশ্বের সর্বত্র ছড়াইয়া দেওয়া তাহাদের কর্তব্যের অন্তর্গত।

বোধ করি, এই আত্মঅহমিকার জোরেই মার্কিনীরা জগতের সকল বিষয়ের ওপরই খবরদারি-মাতব্বরি বহাল রাখিতেও মরিয়া আচরণ করিয়া থাকে। তাহারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সমরবিদ্যা, কলাকৌশল বিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা, অর্থবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, মানববিদ্যা ইত্যাদি হেন কোনো বিদ্যা নাই যে বিদ্যায় তাহারা এই বিশ্বের সকল দেশের ওপরে স্বামিত্ব করিতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি আফগানস্তানে এমন এক অঘটন ঘটিল যে তাহাতে মার্কিনীদের বৃহৎ মুখমণ্ডলে চুনকালি লেপিয়ে গেল!

যে কোনো বড় মানুষের মুখে এই রূপ আকস্মাৎ চুনকালি মাখিয়া গেলে আমার যেরূপ হাহাকার করা হতাশা বোধ হয়, মার্কিন দেশটির জন্যও তদ্রুপ বেদনা বোধ হইতেছে। আমার সবচে বেশি খারাপ লাগিতেছে তাহাদের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পণ্ডিতগণের জন্য। বিশেষত তাহারাই তো যুক্তরাষ্ট্রের আত্মগরিমার পাটাতন গড়িয়া দেন। তাহারাই তাহাদের লেখায়, গবেষণায়, পাঠদানে, জ্ঞানদানে মাটিতে পা ঠুকিয়া দৃঢ়ভাবে এই কথাই রাষ্ট্র করিয়া থাকেন যে জগতে জাতিগঠন হইতে সমাজ বা সংস্কৃতি-নির্মাণে তাহারা অতুলনীয় যোগ্যতার অধিকারী। তাহাদের এই কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিয়া কেবল নিজেদের সন্তানরাই তাহাদের কাছে শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণ যে করেন তাহা নহে, সমগ্র বিশ্ব হইতে প্রাজ্ঞপুরুষেরা শিক্ষালাভের উদ্দেশে মার্কিন দেশে গমন করতঃ থিতু হন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাইতেছে, মার্কিনীদের এই অহঙ্কার আজি শূন্যগর্ভ!

আফগানস্তানে তাহারা কেবল জাতিগঠন, সংস্কৃতিনির্মাণ বা রাজনীতি-বিন্যাসেই ব্যর্থ হয় নাই বরং লজ্জাস্করভাবে সর্বক্ষেত্রে "অতিতুচ্ছ শক্তি"র হাতে নাস্তানাবুদ হইয়াছে।

তাহাদের বিদ্যা-বুদ্ধি-গবেষণা-সাধনা-চর্চা সব কিছুকে "সামান্য লোকজন" কাবুলের মাটিতে নিমেষে ফুৎকার দিয়া উড়াইয়া দিয়াছে। এ যাত্রায় মার্কিনীরা জান লইয়া পালাইতে পারিয়াছে বটে কিন্তু বিস্ময়করভাবে পশ্চিমাদের বিপুল সমরভাণ্ডার অক্ষত অবস্থায় সেই "সামান্য জনেরা" নিজেদের করতলগত করিয়া ফেলিয়াছে। জ্ঞানে বিদ্যায় বুদ্ধিতে বলে কৌশলে শক্তিতে ধনে অতিদুর্বল প্রতিপক্ষ, আত্মগর্বে বলিয়ান মার্কিনীদের সর্বক্ষেত্রে ধুলিসাৎ করিয়া দিয়াছে। হায় মারণাস্ত্রে বোতাম টিপিবার সুযোগ পর্যন্ত তাহাদের জুটে নাই!

অতি দরিদ্র রাষ্ট্রের ততোধিক নগণ্য একজন পাতি-আধ্যাপক হিসেবে আমার মর্মবেদনা এই কারণে গভীর হইয়া দাঁড়াইয়াছে যে তাহাদের কতো সহস্র শত নানান বিদ্যার বিশেষজ্ঞ রহিয়াছেন যাহাদের নাম স্মরণে লইয়া আমরা আত্মবিস্মৃত হইয়া পড়ি, এক্ষণে বিশ্বসভায় সেই সব মহান পণ্ডিতবর্গ কোন শক্তিতে মাথা উঁচু করিয়া তাহাদের আত্মগরিমার কথা কহিবেন আর কেনই বা বিশ্ববাসী তাহাদের সম্মান করিবে! তাহারা যাহা কিছুর জন্য অহঙ্কার করেন, যাহা কিছুর জন্য বিশ্ববাসীর কাছে শ্রদ্ধা ও সম্মান দাবী করেন তাহার সবই যে ফাঁকাবুলির মতো কাবুলের ধুলায় মিলাইয়া গেল!

হায় বড়মানুষের বেদনা যেমন তুচ্ছ মানুষকেও বেদনার্ত করে, আমাকে সেই রূপ বেদনা প্রহার করিতেছে! আহা, তাহেদের মাহামান্য প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই দুই চক্ষে অন্ধকার দেখিতেছেন! আজন্ম যিনি শ্লাঘার সহিত নিজ রাষ্ট্রকে অন্তরে ধারণ করিয়াছেন এই বৃদ্ধবয়সে তাহার সেই অন্তরে "পাষণ্ড আফগান মোল্লারা" হিমশলাকা বিদ্ধ করিয়া দিয়াছে! জানি না তিনি আহার-নিদ্রা নিয়মিত সারিতে পারিতেছেন কি না! শুনিয়াছি মার্কিন দেশটিই এমন যে নিজের দেশে তাহারা যাহাই হোন না কেন, বিশ্বের যে কোনো দেশে পা রাখিবা মাত্র তাহারা এক একজন রাষ্ট্রনায়ক হইয়া উঠেন। এই ঘোরতর শোক সেই সব বড় মানুষেরা কি করিয়া হজম করিতেছেন তাহা আমি কল্পনা করিতে গেলেও রোরুদ্যমান হইয়া পড়িতেছি।

এইভাবে অকৃতজ্ঞ আফগানরা মহান মার্কিনীদের হাতে হারিকেন ধরাইয়া দিবে, তাহাদের সকল জারিজুরিরে তুচ্ছ করিয়া ফুৎকারে উড়াইয়া দিবে- এই কথা এ কালে কে ভাবিতে পারিত! মানীর মানে এমন করিয়া জুতারবাড়ি পড়িয়া যাওয়া যে কতো ভয়ানক ট্রমা তৈরি করিতে পারে তাহা ভাবিয়া আমার বেদনা অতলস্পর্শী হইয়া উঠিতেছে!

মানী-লোক আর সব ভুলিয়া গেলেও অপমান ভুলিতে পারে না, যে কোনো মূল্যে তার মান ফিরিয়া পাইতে সে কুস্তি পর্যন্ত লড়ে! আর জগতের নিয়ম এমনই যে হাতি গর্তে পড়িলে চামচিকাও না কি তাহাকে লাত্থি মারিতে ছাড়ে না। এই শোকগ্রস্ততায় কাহারও মাথা ঠিক থাকিবার কথা নহে, এ কারণে, আমি ভয়ও পাইতেছি, আল্লাহ মালুম, মার্কিনীরা তাঁহাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে কী না কী কাণ্ড করিয়া বসে! এই অবস্থায় তাহাদের প্রতি নিজের সমবেদনা প্রকাশ করা কর্তব্য জ্ঞান করিয়ে এই যৎ কিঞ্চিৎ কথা উপস্থাপন করিয়া রাখিলাম। আশা করি, পাঠকবর্গ এই অধমের বেদনা উপলব্ধি করিতে পারিবেন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়