শিরোনাম
◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির 

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩৫ দুপুর
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্কার পুরস্কারের আদ্যোপান্ত

মুম রহমান, শুধু চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের শিল্প সাহিত্যের ইতিহাসে অস্কার পুরস্কার অত্যন্ত আলোচিত, সম্মানজনক পুরস্কার। যথাবিহিত এই পুরস্কার নিয়েও বিতর্ক আছে। তা বিতর্ক তো জগতের সব কিছু নিয়েই আছে। অস্কার কিংবা নোবেল পুরস্কার নিয়ে অনেক যৌক্তিক বিতর্কও আছে। কিন্তু সেইসব বিতর্কের ভেতর না গিয়ে বরং এই পুরস্কার সম্পর্কে জানা যাক।
১৯২৯ সালের ১৬ মে হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলের ব্লাজম রুমে প্রথম অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রাচীনতম, জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী এই পুরস্কার দিয়ে থাকে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স এন্ড সাইন্স (এএমপিএএস) নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে ১৯২৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৩৫ সাল থেকে প্রিন্সওয়াটারহাউস (বর্তমানে প্রিন্সওয়াটার হাউস কর্পোরেশন) এই পুরস্কারের জন্য ভোট গ্রহণ করে আসছে।

১৯২৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট নাগাদ যে সব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিলো তারমধ্য থেকেই এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আমেরিকার আকাডেমি অব মোশন পিকচাস আর্টস এন্ড সাইন্স নামের প্রতিষ্ঠান ১৯২৭ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানের সমন্বয়ে চলচ্চিত্র নামের যে মাধ্যম গড়ে উঠেছে তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তন করবে এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসাহী করে তুলবে। এর ফলেই জন্ম হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। এই পুরস্কারটির নাম আসলে ‘একাডেমি এওয়ার্ড অব মেরিট’ আর পদকটির নাম ‘অস্কার’। আজ অস্কার নামেই পুরস্কার ও পদক দুটোই পরিচিত।
অস্কার নামটি কী করে এলো তা নিয়ে সুনিশ্চিত কোন ধারণা নেই। কেউ বলে থাকেন একাডেমি লাইব্রেরিয়ান মার্গারেট হারিক এই পুরস্কার দেখে বলেছিলেন এই পদকের মানুষটি দেখতে তার চাচা অস্কারের মতো, সেই থেকে এই নামকরণ। আরেকটি মত হলো, ১৯৩৪ সালে ৬ষ্ঠ অস্কার প্রদানের সময় হলিউডের কলাম লেখক সিডনি সোলস্কি ক্যাথারিন হেপবার্নের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটিকে অস্কার বলে সম্বোধন করে ছিলেন। মত যাই হোক, ১৯৩৯ সাল থেকে একাডেমি এওয়ার্ড অব মেরিট পুরস্কারটিকে ‘অস্কার’ নামে ডাকা শুরু হয়ে যায়।

বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমজিএম-এর শিল্প নির্দেশক সেডরিক গিবসন ‘অস্কার’ পদকের নকশা করেন। এই ট্রফিতে দেখা যায় একজন নাইট ফিল্ম রিলের উপর দাঁড়িয়ে আছেন তার ক্রুসেডের তরবারি নিয়ে। লস এঞ্জেলেসের ভাস্কর জর্জ স্ট্যানলি এই নকশা অবলম্বনে ত্রিমাত্রিক ট্রফি নির্মাণ করেন। ১৯২৯ সালে প্রথম প্রবর্তনের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার পদক বিতরণ করা হয়েছে। সাড়ে ১৩ ইঞ্চি উচ্চতার এই পদকটির ওজন সাড়ে আট পাউন্ড। ব্রোঞ্জের এই পদকটি ২৪ ক্যারেটের সোনায় মোড়ানো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধাতুর সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিন বছর অস্কার পদকটি রঙ করা প্লাস্টারে বানানো হয়। যুদ্ধ শেষে অবশ্য এই পদকগুলো ফেরত নিয়ে নতুন করে ধাতু ও সোনায় মোড়ানো পদক দেয়া হয়।

গত ৮৩ বছর ধরে এই পুরস্কার বিশ্বের চলচ্চিত্র প্রেমী ও কর্মীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, লোভনীয় এবং বিতর্কিত পুরস্কার হিসাবে আলোচনার শীর্ষে রয়ে গেছে। মাত্র ২৭২ জন লোক নিয়ে ১৯২৯ সালের ১৬ মে রুজভেল্ট হোটেলে এ পুরস্কারের সূচনা হয়েছিলো। প্রথম বছরে পুরস্কর প্রাপ্তদের তিন মাস আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো, ফলে মূল অনুষ্ঠানে কোন চমক ছিলো না, স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা ছিলো। পরের বছর থেকে একাডেমি সিদ্ধান্ত নেয়, কোন পুরস্কার প্রাপ্তকে আগে থেকে জানানো হবে না, তবে ঐদিন সকালেই পত্রিকাগুলোকে জানিয়ে দেয়া হতো। ১৯৪০ সালে লস এঞ্জেলস টাইমস বিকালের সংস্করণে পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ছেপে দেয়। এর ফলে ১৯৪১ সাল থেকে আগেভাগে কাউকেই পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম আর জানানো হয় না। ১৯৪১ সাল থেকেই নিয়ম করা হয়, মূল অনুষ্ঠান চলাকালে কেবলমাত্র খাম খুললে জানাা যাবে কে পুরস্কার পেয়েছে। আজ পর্যন্ত সেই খাম খোলার চমক অটুট রয়েছে।

১৯২৯ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১৫টি পদক দেয়া হয়েছিলো। সে বছর সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন জার্মান অভিনেতা এমিল জ্যানিংস, যাকে পুরস্কারের আগেই দেশে ফিরতে হয়েছিলো। তাই তার পুরস্কারটি সবার আগে নির্মাণ করে অনুষ্ঠানের আগেই দিয়ে দেয়া হয়। সেই বিবেচনায় প্রথম অস্কার পদক নির্মাণ করা হয় এমিল জ্যানিংসকে দেয়ার জন্য। প্রথম পুরস্কার অনুষ্ঠানটি খুব একটা নজর কাড়েনি। কিন্তু পরের বছর থেকেই এটি পত্রিকা ও বেতার কেন্দ্রগুলোর কাছে আকর্ষণীয় একটি ইভেন্টে রূপান্তরিত হয়। লস এঞ্জেলস রেডিও দ্বিতীয় বছরের পুরস্কারটির এক ঘণ্টার লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অস্কার অনুষ্ঠান লাইভ প্রচার চলছে। ১৯৫৩ সাল থেকে টিভিতে অস্কার অনুষ্ঠান লাইভ প্রচার শুরু হয়। একটি রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে যে অনুষ্ঠানের লাইভ প্রচার শুরু হয়েছিলো আজ বিশ্বজুড়ে শ’খানেক দেশের টিভি চ্যানেলে এটি সরাসরি দেখানো হয়।

অস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯২৭ ও ১৯২৮ সালের ছবিগুলোর মধ্য থেকে প্রথম অস্কারে কোন সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার ক্যাটাগরি ছিলো না। এর বদলে দুটো পুরস্কার ছিলো, একটি হলো সবচেয়ে অনন্য চলচ্চিত্র (Most Outstanding Picture) যা পায় ‘উইংস’, অন্যটি হলো সবচেয়ে শৈল্পিক মানসম্পন্ন প্রযোজনা (Most Artistic Quality of Production) যা পায় ‘সানরাইজ’। দুটো পুরস্কারই সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। পরের বছর একাডেমি সেরা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একটিই পুরস্কার প্রবর্তন করে যাকে তারা অনন্য প্রযোজনা (outstanding Production) নাম দেয় এবং পূর্ববর্তী ‘উইংস’কে এই ক্যাটাগরিতে ঠাঁই দেয়। এই বিবেচনায় প্রথম অস্কার প্রাপ্ত সেরা ছবি হলো ‘উইংস’।

তবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারটিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকে হয়েছে। ১৯৪১ সালে সেরা ছবির ক্যাটাগরির নামকরণ আবার বদল হয়, এখন থেকে এ পুরস্কারের নাম হয় অনন্য গতিশীল চলচ্চিত্র (Outstanding motion Picture)। ১৯৪৪ সালে এই পুরস্কারের নাম হয় শ্রেষ্ঠ গতিশীল চলচ্চিত্র (Best Motion Picture)। ১৯৬২ সাল থেকে এই পুরস্কারের নামকরণ হয় সেরা চলচ্চিত্র (Best Picture)।

একাডেমি প্রথম বছর ঠিক করতে পারেনি, জনপ্রিয়, নাকি শিল্প সম্মত ছবিটিকে সেরা পুরস্কার দেবে। অন্যদিকে প্রযোজক, নাকি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কাকে পুরস্কার দেবে এ সব নিয়েও দ্বিধা ছিলো। ‘জ্যাজ সিঙ্গারকে’ ১৯২৯ সালে অস্কারে সেরা ছবি, সেরা চিত্রনাট্য ও সেরা কারিগরি দক্ষতার জন্যে মনোনয়ন দেয়া হয়। ‘জ্যাজ সিঙ্গার’ই বিশে^র প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। কিন্তু সে সময় বাকী সব নির্বাক ছবির সাথে সবাক এই ছবির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকে অন্যায্য বলে মনে করেন সমালোচকরা। তাই এটি সেরা ছবির পুরস্কার পায়নি। অবশ্য এ ছবির প্রযোজক ডেরিল এফ জানুককে বিশেষ অস্কার দেয়া হয়, সূচনাকারী বিস্ময়কর সবাক ছবি ‘জ্যাজ সিঙ্গার’ প্রযোজনা করার জন্যে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্স জ্যজা অন্যতম সবাক চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্যও বিশেষ পুরস্কার পায়। চার্লি চ্যাপলিনকেও বিশেষ অস্কার দেয়া হয় ‘দ্য সার্কাস’ ছবির প্রযোজনা, পরিচালনা, রচনা ও অভিনয়ের জন্য।

প্রথম বছর সেরা চলচ্চিত্রের জন্যে তিনটি ছবি মনোনয়ন পেয়েছিলো। পরবর্তী তিন বছর পাঁচটি করে ছবি মনোনয়ন পায়। এটি বাড়তে বাড়তে ১৯৩৩ সালে আটটি, ১৯৩৪ সালে ১০টি এবং ১৯৩৫ সালে ১২টি চলচ্চিত্র মনোনয়ন পায়। ১৯৩৭ সাল থেকে ১০টি ছবিকে মনোনয়ন দেয়া শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সাল থেকে ৫টি চলচ্চিত্রকে সেরা মনোনয়ন দেয়া শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে সেরা চলচ্চিত্রের জন্যে আবার ১০টি করে চলচ্চিত্রকে মনোনয়ন দেয়া শুরু হয়েছে। শুরুতে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারটি তুলে দেয়া হতো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হাতে, ১৯৫১ সালে থেকে তা দেয়া হয় প্রযোজকের হাতে।

বর্তমানে ২৪টি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। মজার বিষয় হলো একাডেমি এওয়ার্ডের পাশাপাশি স্টুডেন্ট একাডেমি এওয়ার্ডও দেয়া হয়। এই ক্যাটাগরিগুলো হলো : কেন্দ্রীয় চরিত্রে সেরা অভিনেতা, পাশ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা, কেন্দ্রীয় চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী, পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী, সেরা রূপান্তরিত চিত্রনাট্য, সেরা এনিমেশন চিত্র (২০০১ সালে প্রবর্তিত), সেরা এনিমেশন স্বল্পদৈর্ঘ চিত্র, সেরা শিল্প নির্দেশনা, সেরা চিত্রগ্রহণ, সেরা পোশাক পরিকল্পনা, সেরা পরিচালক, সেরা তথ্যচিত্র, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ তথ্যচিত্র, সেরা ফিল্ম এডিটিং, সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র, সেরা মেকআপ, সেরা মৌলিক সুর, সেরা মৌলিক গান, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য, সেরা মৌলিক কাহিনী, সেরা চলচ্চিত্র, সেরা শব্দ সম্পাদনা, সেরা শব্দমিশ্রণ এবং সেরা ভিজ্যুয়াল এফেক্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়