আহসান হাবিব: আমরা যে ক্রমাগত দিনের পর দিন বেঁচে থাকতে বাধ্য হই তার প্রধান কারণ আমাদের বিশ্বাস। আমরা অজস্র বিষয়ে বিশ্বাস রাখি। যা দেখি না, যা ছুঁই না, যা অনুভব করি না, সেইসবের প্রতি আমাদের বিশ্বাস অগাধ। আর সহজ বিশ্বাস এই যে আগামীকাল অবশ্যই শুভদিন হয়ে দেখা দেবে। এই বিশ্বাস যে শুধু নীচু তলার মানুষ করে, তাই নয়, সব শ্রেণীর মানুষ করে। তবে বিশ্বাসের আছে বিচিত্র ধরন। কিছু বিশ্বাস আছে ব্যক্তির নিজস্ব চেতনা এবং ধারণার বাইরে স্বাধীনভাবে অবস্থান করে। যেমন হয়তো কোনো বস্তু নিয়ে কাজ করার সময় মনে হতে পারে এটি কোন ক্ষতির কারণ হবে না। যেমন একজন রেডিয়াম খনিতে কাজ করার সময় কোনো শ্রমিক ভাবতে পারে রেডিয়াম তার কোনো ক্ষতি করবে না। এটা তার বিশ্বাস। কিন্তু রেডিয়াম এমনই একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ যে তার সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকলে শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেবে, এমনকি ক্যান্সারে মৃত্যুও হতে পারে। এটা ব্যক্তির চেতনা কিংবা বিশ্বাস নিরপেক্ষ বস্তুগত সত্য। আবার এর উল্টোটাও দেখা যায়। যেমন কেউ হয়তো ভাবছে আমেরিকায় তার একজন বন্ধু আছে, যদিও সে কখনো সেই বন্ধুকে দেখেনি, কিংবা কথা বলেনি, সে হয়তো স্বপ্নে তার সঙ্গে কথা বলছে, আলিঙ্গন করছে।
এই বিশ্বাস একান্ত তার ব্যক্তিগত। বন্ধুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার বিশ্বাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। এটাকে বলে ‘ব্যক্তিগত’ বিশ্বাস, অর্থাৎ ব্যক্তির নিজস্ব চেতনা সাপেক্ষ। আর একধরনের বিশ্বাস আছে যা অসংখ্য মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখানে ব্যক্তিগত কিংবা বস্তুগত বিষয় কাজ করে না। যেমন ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা ব্যক্তির বিশ্বাসের বিষয় নয়, একজন ব্যক্তি বিশ্বাস না করলেও তার অস্তিত্ব বিষয়ে কিছু যায় আসে না। কিংবা রাষ্ট্রের কোনো একটি নীতি কোন একজন ব্যক্তির না মানা বা অবিশ্বাসের ফলে রাষ্ট্রের কিছু যায় আসে না। কারণ এটি সেই রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের বা সম্মিলিত বিষয়। যদি রাষ্ট্রের সব নাগরিক কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেটাকে নাকচ করে, তখনই কেবল তা সত্য হতে পারে। একটি রাষ্ট্রের মূলনীতি যদি ‘সমাজতন্ত্র’ হয় এবং কোনো ব্যক্তি এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন না করে, তাহলে সমাজতন্ত্রের কিছু যায় আসে না। এ ধরনের বিশ্বাসকে বলা হয় আন্তঃব্যক্তি বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া আমাদের চলে না। বিশ্বাসই আমাদের ক্রমাগত বাঁচিয়ে রাখে। আমি বিশ্বাস করি ‘মাধুরী’ আমাকে ভালোবাসে, ব্যস, আমি বাঁচতে রাজি থাকি হাজার বছর। লেখক : ঔপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :