আব্দুল্লাহ মামুন: [২] বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সেনাসদস্যের হাতে একজন ছাত্র প্রহৃত হবার ঘটনা এবং এরপর ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল তারই প্রতিবাদে শিক্ষকরা প্রতিবছর ২৩ অগাস্টকে কালো দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিবিসি বাংলা।
[৩] ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনা সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ওই বছরের ২০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের মধ্যকার ফুটবল খেলা নিয়ে শিক্ষার্থী ও সেনা সদস্যদের মধ্যে দ্ব›দ্ব বাধে। সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান।
[৪] এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনা সদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। এর প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা সেনা সদস্যদের ছাত্রদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। কিন্তু সেনা সদস্যরা তা প্রত্যাখান করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
[৫] এর পরদিন ২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন ক্যাম্পাসে। তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। নীলক্ষেত, টিএসসি, কার্জন হল এলাকাসহ ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। বাংলাট্রিবিউন।
[৬] ২২ আগস্ট এই আন্দোলন ছড়িয়ে পরে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
[৭] ২৩ আগস্ট রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক হারুণ-অর-রশিদ ও তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সদরুল আমিনকে। আরো দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
[৮] এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
[৯] ঘটনার ৬৬ দিন পর খুলে দেয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস খোলার পর গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেয় সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার। পরের বছর ২০০৮ সাল থেকে এই দিনটিকে পালন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস হিসেবে। বিডি জার্নাল।
আপনার মতামত লিখুন :