রাতিন রহমান: জাকি আনওয়ারি। বয়স মাত্র ১৭ বছর। খেলত আফগানিস্তানের বয়সভিত্তিক ফুটবল দলে। ইন্টার মিলানের সমর্থক জাকি ফুটবল ভালোবাসতো, চেয়েছিলো নিজের জীবনটা নিজের হাতেই সাজাবে। ‘তোমার জীবনের চিত্রশিল্পী তুমি নিজে। অন্য কারও হাতে তুলিটা তুলে দিয়ো না।’ এটি ছিলো জাকির শেষ ফেসবুক পোস্ট। আফিম চাষীরা কাবুল দখলে নেবার পর আতংক ঘিরে ধরে জাকিকে, এই বর্বরদের দখলদারিত্বে আদৌ নিজের জীবনটা নিজের হাতে আঁকতে পারবে কিনা, সেই আশংকা থেকেই কাবুল থেকে উড়ে যাওয়া মার্কিন বিমানবাহিনীর সি-১৭ সামরিক বিমানে জায়গা না পেয়ে চাকার মধ্যেই আশ্রয় নিয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলো জাকি। কী ভয়াবহ আতংক আর কতোটা প্রবল মরিয়া হলে অসহায়ের মতো একটা চলন্ত বিমানের চাকা ধরে ঝুলে পড়তে পারে মানুষ! কিন্তু এতো আপ্রাণ চেষ্টাতেও শেষ রক্ষা হয়নি জাকির। উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার (চাকা) বন্ধ করতে সমস্যা হওয়ায় জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন পাইলট। কাতারের আল উদেইদ এয়ারবেসে ল্যান্ড করার পর দেখা যায়, ল্যান্ডিং গিয়ারে একজনের দেহাবশেষ।
গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মার্কিন বিমানবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়েছিলো। আজ জানা গেছে, এই দেহাবশেষ জাকি আনওয়ারির। এমন অসম্ভব বেদনাদায়ক একটা সংবাদে এদেশের আফিম চাষীদের সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া হলো, এই কিশোর ছেলেটা আসলে দেশের শত্রু ছিলো, শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমের শত্রু ছিলো, নাহলে আফিম চাষীদের আফগানিস্তান জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার এই মহান কার্যক্রম ফেলে কেউ পালাতে চায়? একটা অসহায় কিশোরের প্রতি ন্যুনতম এম্প্যাথি বোধ বা তার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা তো দূরে থাক, কেন সে বিমানের চাকায় করে পালাতে গেলো আর কেন সেখানে আটকে মারা গেলো, সেই দোষে পারলে তাকেই শূলে চড়াচ্ছে এদেশের আফিমচাষী প্রেমীরা। তাদের একটাই কথা, আফিম চাষীরা তো আগের মতো নেই, তারা অনেক ভালো হয়ে গেছে, ২০ বছর আগের সেই বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতা তারা দেখাবে না বলে টেলিপ্যাথীর মাধ্যমে কথা দিয়েছে তাদের এদেশের মুরিদদের। সুতরাং এই কারণেই এই আফিম চাষীরা এবার সহীহশুদ্ধ শান্তির প্রতিষ্ঠাতা, তাদের অস্ত্র হাতে দখল করা এই বেহেশতি বাগান ছেড়ে যেইই পালানোর চেষ্টা করবে, সেইই দেশের শত্রু! কান্দাহারে গত পরশু আজিজি ব্যাংকে ঢুকে শান্তির পুত্র আফিম চাষীরা নারী কর্মীদের বের করে দিয়েছে আর জানিয়ে দিয়েছে তাদের কোনো পুরুষ আত্মীয়কে ওই ব্যাংকে চাকরি দেবে তারা। বেশ উদার আচরণই তো, তাই না? শুধু বের করে না দিয়ে মেরেও তো ফেলতে পারতো, কী বলেন? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :