আহসান হাবিব: প্রায়ই একটা কথা শুনি- তিনিই বুদ্ধিজীবী যিনি সত্য উচ্চারণ করেন। আমি বলি ‘ভুল’। বুদ্ধিজীবী যা উচ্চারণ করেন তা তার রাজনৈতিক দর্শনেরই প্রকাশ । সেটা কোনো একটা শ্রেণির পক্ষে যাবেই। সহজ উদাহরণ দিচ্ছি, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, কিন্তু তিনি যা বলেন তা সত্য কিংবা মিথ্যা নয়, তিনি যা বলেন তা একটি শ্রেণীর পক্ষে যায়, তার পক্ষ প্রলেতারিয়েতের পক্ষে । তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে বুর্জোয়া পক্ষ । অমর্ত্য সেন একজন পৃথিবী বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, কিন্তু তিনি কথা বলেন বুর্জোয়া অর্থনীতির পক্ষে, প্রলেতারিয়েতের পক্ষে তিনি দাঁড়ান না। এভাবে পৃথিবীতে যতে াবুদ্ধিজীবী এসেছেন, তারা কোনো না কোনো পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এটা সত্য কিংবা মিথ্যার পক্ষ নয়, রাজনৈতিক পক্ষ। কার্ল মার্ক্স পৃথিবীর সেরা বুদ্ধিজীবীর একজন, তিনি তার সমস্ত উচ্চারণ প্রলেতারিয়েতের পক্ষে করেছেন। গ্রামসী একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, তিনি তার সমস্ত উচ্চারণ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রলেতারিয়েতের পক্ষে। পৃথিবীতে বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীর অভাব নেই।
বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষ যেকোনো সংকটে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা আশা করে । তাদের ভূমিকা তাদের মনমতো না হলে গালি দেয়, শাপশাপান্ত করে। তারা ভুলে যায় বুদ্ধিজীবীদের শ্রেণি অবস্থান। শ্রমিকদের দাবি আরও বেতন বৃদ্ধির জন্য নিশ্চয়ই ইউনূস কিংবা অমর্ত্য সেন দাঁড়াবেন না, দাঁড়াবেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কিংবা এম এম আকাশ। তারা কারা? পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন তারা সবাই বুদ্ধিজীবী কিন্তু একই শ্রেণির পক্ষে দাঁড়ান না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সিংহভাগ বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, এর বিপক্ষেও দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। পৃথিবীর ইতিহাসে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা লক্ষ্য করলেই তাদের রাজনৈতিক দর্শন শনাক্ত করা যায়। আজকের দুনিয়ায় নোম চমস্কি একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, তিনি একজন মার্ক্সবাদী বুদ্ধিজীবী, কিন্তু এনার্কিস্ট। ফরহাদ মজহারও একজন বুদ্ধিজীবী, তবে তিনি জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী। তাই বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে সুবিধামত ভূমিকা আশা করা রাজনৈতিক অজ্ঞতার পরিচায়ক। এটি একটি লড়াই, রাজনীতি দিয়ে যার মোকাবেলা করতে হয়, মুফতে পাওয়া যায় না। লেখক : ঔপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :