আলী রীয়াজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের প্রধানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এবং ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের’ কর্মীরা। আইন বিভাগের প্রধান আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ তিনি ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বক্তব্য দিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া একটা স্ট্যটাসের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের প্রধানের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার ঘটনা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করেছেন সেটা কোনো গণমাধ্যমেই বলা হয়নি, কারণ কর্তৃপক্ষ আদৌ কিছু করেছেন বলে মনে হয় না। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ নাকি এই নিষ্ক্রিয়তা আসলে কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্ব নাকি এটাই তাঁদের আদর্শিক অবস্থান তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু যা বিতর্কের উর্ধ্বে তা হচ্ছে মতপ্রকাশের কারণে কোনো ব্যক্তিকে হেনস্তা করা বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী।
নাগরিক হিসেবে যেকোনো ব্যক্তির মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা সংবিধান দিয়েছে সেটাই এ ক্ষেত্রে হরণ হয়েছে এবং তা ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে। অথচ যে বিশ্ববিদ্যালয় ঘটা করে শতবর্ষের উৎসব করেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নির্বিকার। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই কথা বলার ও সমাবেশের অধিকার প্রায় অবসিত, ভয়ের সংস্কৃতি সর্বব্যাপ্ত হয়ে পড়েছে। এই ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার একটা উপায় হচ্ছে সেন্সরশীপকে ‘আউটসোর্সিং’ করা। দৃশ্যত রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না; কিন্তু তা তুলে দেওয়া হয়েছে ‘বে-সরকারি’ ব্যক্তিদের হাতে। ক্ষমতাসীনদের কর্মী ও সমর্থকরাই নির্ধারন করছেন কোনটি ‘রাষ্ট্রের পক্ষে’ আর কোনটি ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’। এবারই প্রথম তা ঘটেছে তা নয়, এর আগে এমনকি একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ মামলা হয়েছিলো। রাষ্ট্র, সরকার এবং দল একাকার হয়ে গেলে এটাই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মতপ্রকাশের কারণে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা আসলে বলা হচ্ছে যিনিই মতপ্রকাশে উৎসাহী তাঁর বিরুদ্ধে। ফলে তালা কেবল বিশেষ অফিসের দরজায় লাগানো হয়েছে তা নয়, এই তালা আসলে লাগানো হয়েছে এবং হচ্ছে মতপ্রকাশের ক্ষীণ যে সুযোগ আছে সেই দরজায়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :