শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৩ দুপুর
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

`যে আমাকে ভালোবাসে সে যেন হুসাইনকে ভালোবাসে'...

মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান ২০ বছর ধরে জুলুমপূর্ণ শাসন ও হত্যাকাণ্ড বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন পরিচালনার পর ৬০ হিজরিতে মারা যায়। মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের সঙ্গে কৃত চুক্তির বরখেলাফ করে নিজ সন্তান ইয়াজিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে। ইয়াজিদ ছিল দুশ্চরিত্র,মদ্যপায়ী ও ইসলামবিরোধী। সে প্রকাশ্যে ইসলামের পবিত্র বিধি- বিধানের অবমাননা করতো এবং মদপান করতো।

ইমাম হুসাইন (আ.) প্রথম থেকেই ইয়াজিদের বিরোধিতায় নামেন। ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেই মদিনার গভর্নরকে লিখিত আদেশ করে,‘হুসাইনের কাছ থেকে আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ কর। যদি সে রাজি না হয় তাহলে হত্যা কর।’ ইমাম কিছুতেই ইয়াজিদের আনুগত্য করতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। সংবাদ পেয়ে কুফার লোকেরা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কাছে অজস্র পত্র লিখে। পত্রে তাঁকে কুফা আসার অনুরোধ জানায় তারা। ইমাম হুসাইনও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফায় পাঠান। প্রথমে কুফার হাজার হাজার লোক আকীলের সঙ্গে যোগ দেয়। কিন্তু ইয়াজিদের পক্ষ হতে কুফার গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কুফায় প্রবেশ করলে কুফার লোকেরা প্রতারণাপূর্ণ নানা চালে ধোঁকায় পড়ে যায় এবং শপথ ভঙ্গ করে মুসলিম ইবনে আকীলকে নিঃসঙ্গ করে ফেলে।

ইবনে যিয়াদ ছিল ধোঁকাবাজ ও নিষ্ঠুর। শেষ পর্যন্ত ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকীলকে বন্দি করে শহীদ করে। কুফার লোকেরা যে সময় মুসলিম ইবনে আকীলের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল সে সময় মুসলিম ইবনে আকিল ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কাছে একটি চিঠি লিখেন এবং তাকে সংবাদ দেন যাতে তিনি কুফায় আসেন। ইমাম হুসাইনও তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে কুফার উদ্দেশে রওয়ানা হন। কুফার কাছাকাছি পৌঁছেই তিনি কুফার জনগণের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ ও মুসলিম ইবনে আকীলের শহীদ হওয়ার সংবাদ পান।

উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মুসলিমকে শহীদ করার পর কুফার ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং হুর ইবনে ইয়াজিদ রিয়াহীকে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তার সঙ্গীদের ওপর নজরদারি করতে পাঠায়। এরপর ওমর ইবনে সা’দকে ৩০ হাজার সৈন্যসহ কারবালায় পাঠায়। সে ওমর ইবনে সা’দকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে,যদি সে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে তাহলে তাকে রেই শহরের গভর্নর করা হবে। গভর্নরের পদ পাওয়ার লোভে কারবালায় আসার পর ওমর ইবনে সা’দ ইমাম হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের ওপর অবরোধ আরোপ করে এবং তাঁদের পানি সংগ্রহের পথ বন্ধ করে দেয়।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গী-সাথিরা ছিলেন আত্মত্যাগী ও সবচেয়ে সাহসী। তাঁদের সংখ্যা ছিল অনূর্ধ্ব ৭২ জন। তাঁরা ১০ মুহররম তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতা হুসাইন (আ.)-এর প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে বীরের মত লড়াই করে সগৌরবে শাহাদাত বরণ করেন।
কারবালার প্রত্যক্ষ যুদ্ধ যদিও সময়ের বিচারে খুব সংক্ষিপ্ত ছিল তথা ১০ মুহররম সকাল থেকে আসরের সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, কিন্তু এর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বীরত্ব, আত্মত্যাগ, ঈমান ও ইখলাস (নিষ্ঠা)-এর পরাকাষ্ঠা।

কারবালার ঘটনা-প্রবাহ একটি বিশ্ববিদ্যালয় তুল্য যেখানে দুগ্ধপোষ্য শিশু হতে শ্মশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধ ও মানবজাতির সামনে মানব মর্যাদা ও স্বাধীন চেতনার শিক্ষা দেন। যেখানে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সহচররা পবিত্র ইসলামকে নতুন জীবন দান করার পাশাপাশি উমাইয়্যা বংশের নষ্ট চরিত্রের শাসকদের পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন।

ইয়াজিদ ছিল সাঁইত্রিশ বছর বয়স্ক মাত্রাতিরিক্ত বিলাসী, অপরিণামদর্শী ও বেপরোয়া ধরনের খোদাদ্রোহী। আর ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন জ্ঞানে-গুণে পরিপক্ব ছাপ্পান্ন বা সাতান্ন বছরের এক পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ ও মহান আল্লাহর মনোনীত নেতা।
ইমাম হুসাইন (আ) ইসলামকে রক্ষার স্বার্থে শাহাদাত লাভের প্রবল আগ্রহ লালন করেছেন সব সময়। তিনি বলতেন : ‘শরীরের জন্য যদি মৃত্যুই অনিবার্য,তবে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াই মানুষের জন্য উত্তম।’জিহাদের জন্য নিজের ধন-সম্পদ,পুত্র-পরিজন ও নিজের জীবনকে দৃঢ়চিত্তে,স্থির মস্তিষ্কে উৎসর্গ করার মাধ্যমে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। জীবন উৎসর্গের এমন দৃষ্টান্ত এ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের খোদায়ী আহবানে সাড়া দানের এমন ঘটনা ছিল নজিরবিহীন।

ইমাম হুসাইনের চারিত্রিক মাধুর্যের আকর্ষণ ক্ষমতা এত প্রবল ছিল যে, পরম শত্রুও তাঁর মিত্রে পরিণত হত। ইয়াজিদ বাহিনীর একাংশের অধিনায়ক হোর ইবনে ইয়াজিদ নিজের জীবন বিপন্ন করে হুসাইন (আ.) -এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। শুধু কি একা! না,আরো কয়েক জন সৈন্যসহ। আহলে বাইতের সম্মান রক্ষার্থে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে এ জিন্দাদিল মুজাহিদরা একে একে নিজেদেরকে কারবালা প্রান্তরে কুরবান করে দেন।

বন্ধু,আত্মীয়-পরিজন,ভাইয়ের সন্তান,নিজের সন্তানদের একের পর এক মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেও ইমাম হুসাইন (আ.) ক্ষণিকের জন্যও বিব্রত,বিচলিত হননি। নিশ্চিত মরণ জেনেও তাঁর পদযুগল একটুও টলেনি। একবারের জন্যও শত্রুকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। পর্বতসম দৃঢ়তা নিয়ে প্রগাঢ় আস্থার সাথে একাকী শতসহস্র ইয়াজিদী সৈন্যের বিরুদ্ধে সিংহের মতো লড়াই করে হাসিমুখে শহীদ হলেন। কিন্তু খোদা ও রাসূলবিরোধী অবৈধ, স্বৈরশাসকের সাথে হাত মেলাননি। এ অসম একতরফা চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে নিজের পরিণতি কী হতে পারে তা পূর্বাহ্ণে নিশ্চিত জেনেই এ আপসহীন সিপাহসালার শাহাদাতের পেয়ালা পান করলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন : ‘নির্যাতনকারীর আনুগত্য জঘন্যতম অপরাধ। আমি মৃত্যুকে সৌভাগ্য মনে করি। কিন্তু জালিমের সাথে জীবনযাপনকে অপমান ছাড়া কিছুই মনে করি না।’

কারবালায় আত্মত্যাগ ইমাম হুসাইনকে চির-জীবন্ত করেছে ও মৃতপ্রায় ইসলামকে দিয়েছে নতুন জীবন। অন্যদিকে পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে প্রকৃত মৃত্যুর শিকার হয়েছে,পক্ষান্তরে ইমাম হুসাইন কিয়ামত পর্যন্ত মুমিনের হৃদয়ে জাগরুক থাকবেন। হুসাইনের পবিত্র খুন কিয়ামত পর্যন্ত সকল মজলুম মুসলমান ও মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে বিপ্লবের আগ্নেয়গিরিতুল্য আদর্শ ও যুগে যুগে আশুরার শহীদী এই আদর্শের অনুসরণ সব ধরনের জালিম, মুনাফিক ও রাজতন্ত্রী স্বৈরশাসকদের কবর রচনা করবে। মহানবী (সা) বলেছেন, ‘হুসাইন আমা হতে আর আমি হুসাইন থেকে। যে হুসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। …যে আমাকে ভালোবাসে সে যেন হুসাইনকে ভালোবাসে।’ পার্সটুডে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়