শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ০২:২২ রাত
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ০২:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাসুদ রানা: আফগান ও তালেবান : কী আছে সামনে?

মাসুদ রানা: আফগানিস্তানে বিভিন্ন প্রকারের ক্ল্যান (clan) আছে, ট্রাইব tribe) আছে, এথ্(ethne) আছে, কিন্তু সেখানে বস্তুতঃ কোনো ‘আফগান’ জাতি গড়ে উঠেনি। জাতি গড়ে ওঠার জন্যে বিভন্ন সম্প্রদায়ের যে-অভিন্ন কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থাকা, অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-প্রথার চর্চা এবং সর্বোপরি অভিন্ন উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে থেকে একটি অভিন্ন আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষার প্রয়োজন, সেটি আফগানিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে গড়ে উঠেনি। মার্ক্সবাদী শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্ব কিংবা ইসলামী জিহাদ, কোনোটাই আফগানিস্তানের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও স্থিতি আনতে পারেনি এবং পারবে না বলে মনে হয়। জাতিত্বের প্রশ্ন এড়িয়ে আফগানিস্তানে কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থাই টিকবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে না। তালেবানেরা জাতি-রাষ্ট্রে বিশ্বাসী নয়। তারা ইসলামি আমিরাতে বিশ্বাসী। কিন্তু তাদের প্রস্তাবিত আমিরাতের ভিত্তি কী? শুধুই ধর্ম? শুধুই ধর্ম হলে এটি শুধু আফগানিস্তানের সীমানায় সীমিত থাকবে কেনো? তালেবানদের মধ্যে সেভাবে জাতিত্বের ধারণা না থাকলেও একটি দেশবোধ কাজ করছে। আমি মনে করি, রাষ্ট্র গঠনের জন্যে তালেবানদেরকে আজ হোক কিংবা কাল হোক, একটি জাতিগত আত্মপরিচয়ের প্রয়োজন হবেই। কারণ, বিশ্ব জাতি-বিভক্ত ও জাতিময়। তালেবানদেরকে এটি বুঝতে হবে।
অবশ্য, বিশ বছর আগের তালেবান ও আজকের তালেবান সম্ভবতঃ এক নয়। আজকের তালেবানের হাতে লড়াই করার জন্যে বন্দুকের সঙ্গে-সঙ্গে একটি করে স্মার্টফোনও আছে। এর মধ্যে তাদের নেতৃত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বহুমাত্রিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সীজণ্ড হয়ে উঠেছেন। ফলে, তারা বিশ্বপরিসরে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন না হয়ে পারেন না। তালেবান নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথকভাবে নানা সময়ে রাশিয়ার এবং সর্বশেষ চীনের বৈঠকগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আফগানিস্তানে তালেবানেরা চাইবে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব, স্থিতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তারা কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিশ্চয় বুঝে থাকবেন যে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আদান-প্রদান ছাড়া তারা বর্তমান যুগে কোনো ক্রমেই মধ্যযুগের নগররাষ্ট্র বা সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারেন না। আমি বিস্মিত হবো না, যদি দেখি যে আফগানিস্তানের নর্দার্ণ এ্যালায়েন্স-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ক্ষমতা-সহভাগে তালেবানরা সম্মত হয়ে সরকার গঠন করছে। অর্থাৎ, জাতিবিভক্ত ও জাতিময় বিশ্বে আফগানিস্তানে একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠন করে অপারেইট করতে হলে তালেবানদেরকে একটি জাতি গঠনের দিকে যেতেই হবে। মধ্য যুগীয় রাষ্ট্র ও বিধিবিধান দিয়ে তারা কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না।
তালেবানেরা যুদ্ধ করেই বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু এ-যুদ্ধ বিজয়ীদেরকে জনগণ উল্লসিত হয়ে বরণ করছেন না। বরং জনগণ ব্যাপক হারে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে! অর্থাৎ, তালেবানেরা জনগণের কাছে প্রথাগত যুদ্ধজয়ী কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যক্ষিত নয়। আর, সে-কারণেই তালিবানেরা জনগণোকে আশ্বস্ত করছে ভয়ের কিছু নেই বলে। এমনকি জেনারেল এমনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে আগের সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আস্থার সাথে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান নেতৃবৃন্দ। আমার ধারণা, তালিবানেরা আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো জিহাদ রফতানি করতে যাবে না। সুতরাং, বাংলাদেশের ফরহাদ মজহারের মতো মার্ক্সবাদী শ্রেণীসংগ্রাম ও ইসলামী জিহাদের hotchpotch) তাত্ত্বিকরা বাংলাদেশে বসে যতোই জয়-ডঙ্কা বাজান না কেনো, তাদের মনের খুয়ায়েশ পূরণ হবে বলে মনে হয় না! বহিরাক্রমণের চাপে থাকলে যে ঐক্য লক্ষ করা যায়, সেটি হচ্ছে ক্রাইসিস-কালীন ঐক্য, যা বিভিন্ন ক্লান ও ট্রাইব করে থাকে। কিন্তু প্রকৃত ঐক্য বুঝা যায় শান্তি ও সমৃদ্ধির কালে। তালেবানেরা নিজেরাই একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না, যদি না তারা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী হয়ে যে-নামেই হোক না-কেনো একটি শক্তিশালী ও আধুনিক আফগান জাতি ও জাতি-রাষ্ট্র গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করে। তালেবানেরা যদি সেই আগের মতোই মধ্যযুগের রাষ্ট্র গঠন করে সমাজের নারী-সহ সকলকে মধ্যযুগের দিকে বন্দুকের নলের মুখে ঠেলে দেয়, ওরা জনশূন্য আফগানিস্তানের মাটি পেতে পারে, কিন্তু আফগান জনগণকে পাবে না। আজকের যুগে কোনো দেশের জনগণই বিশ্বের অন্যান্য জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সমগ্র বিশ্ব সকলের কাছে শুধু পাঠ্য নয়, শ্রাব্য ও দৃশ্যমানও বটে। তাই, মানুষকে আধুনিক যুগ থেকে প্রাচীন যুগে বা মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেওয়ার শক্তি কারও নেই! নতুন করে কোনো অবতার এসে নিজের জান কুরবান করে বললেও মানুষকে ইতিহাসের পেছন দিকে ফেরানো যাবে না। আফগানিস্তানের জনগণও কেবল সামনের দিকেই এগিয়ে যাবে। আমার ধারণা, তালেবানেরাও জনগণকে অনুসরণ করবে। ১৭/০৮/২০২১। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়