শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ০৩:১১ রাত
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ০৩:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: বঙ্গবন্ধুকে অন্তরে ধারণ করলে নেতা-নেত্রীরা এতো অন্যায় ও দুর্নীতি করতে পারতো না

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ কেমন আগাচ্ছিলো তার প্রমাণ মিলে ১৯৭৪ সালে প্রণীত শিক্ষায় আমাদের মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন কী হবে আর আমাদের শিক্ষায় বিদেশি ভাষার অবস্থান কী হবে তার দিক নির্দেশনায়। সেই নীতিমালায় ছিলো সকল পর্যায়ের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা ধীরে ধীরে অবশ্যই বাংলায় হতে হবে এবং বিদেশি বই সরকারি খরচে বাংলায় অনুবাদে গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি সকল লেভেলে বাংলা চালু সত্বেও বিদেশী ভাষা হিসাবে ইংরেজির গুরুত্ব কমানো যাবে না। আমাদেরকে বিদেশি ভাষা বিশেষ করে ইংরেজিও গুরুত্বের সঙ্গে শিখতে হবে। কিন্তু কোনো ভাবেই বাংলার বিনিময়ে ইংরেজি নয়।

কেবল ওপরে উল্লেখিত নীতিমালার অধীনে যদি দেশ চলত তাহলে আজকে একটা আলোকিত বাংলাদেশ হতো। দুঃখ কী জানেন? বঙ্গবন্ধুরই দল তারই কন্যার নেতৃত্বে আজ ১২ বছরেরও বেশি সময় যাবৎ নিরবিচ্ছিন্ন এবং নিরংকুশভাবে ক্ষমতায়।  মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে কিন্তু বাস্তবে তারা তার স্বপ্নকে ভেঙে চৌচির করে দিচ্ছে। কোথাও তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখি না। বঙ্গবন্ধু শিক্ষিত আলোকিত মানুষদের সম্মান করতেন। সেই জন্যই আমার পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (১৯৭৩-১৯৭৫) আব্দুল মতিন চৌধুরী আর বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের জন্য মাঝে কোনো আমলা ছিলো না। সরাসরি যোগাযোগের জন্য ছিলো লাল টেলিফোন। আর বর্তমান সরকার কি করলো? ২০১৫-র পে স্কেলের মাধ্যমে অন্যদের ওপরে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সে নামিয়ে দিলেন। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। আর শিক্ষকদের এই সম্মান দিয়ে আপনারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন?

বঙ্গবন্ধুকে চিনতে হলে  ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য কাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি কেমন শিক্ষানীতি গঠন করেছিলেন সেইসব দলিল ঘাটলেও বঙ্গবন্ধুকে চেনা যাবে। শিক্ষকদের কোন উচ্চতায় দেখতেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার মাধ্যমে। সমস্যা হলো শিক্ষকরা প্রমাণ করেছেন তারা সেই সম্মানের যোগ্য ছিলেন না এবং আজও না। শিক্ষকরা স্বায়ত্বশাসনের সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছে যা আজও চলমান। সমস্যা হলো ’৭৫ এর পর থেকে মাত্রাভেদে এই ধ্বংস ধ্বংস খেলায় সরকারেরাও যুক্ত হয়ে পরেন। দিন যতো গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয়করণের মাত্রা ততোই বেড়েছে। এমন একটি দলীয় সরকার পাওয়া যাবে যারা এর ব্যতিক্রম ছিলো। একটি দেশকে গড়ার সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দরতম পথ হলো সুন্দর একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। বর্তমান সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই বাস্তবায়নের কথা ভাবতো তাহলে তারা ১৯৭৪ সালে শিক্ষার যেই মাধ্যমের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মাতৃভাষা এবং বিদেশি ভাষার গুরুত্বের যেই বিভাজন করা হয়েছিলো সেইটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতো। সেই পথে না হেটে বরং উল্টো পথে গিয়ে কীভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় আমি সেটা বুঝি না।

আমার মনে হয় বর্তমান সরকারের নেতা-নেত্রীরা বঙ্গবন্ধুর নাম মুখের আগায় রাখে অন্তরে রাখে না। সকল বালা মুসিব্বৎ থেকে রক্ষার জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে তারা বঙ্গবন্ধুর নাম মুখের আগায় রাখে। অন্তরে ধারণ করলে এতো দুর্নীতি, এতো অন্যায় করতে পারতো না। ১২ বছর নির্ব্বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতা অনেক লম্বা সময়। এতো বছর ক্ষমতায় থেকেও নেতা-নেত্রীরা তাদের সকল বক্তৃতায় বক্তব্যে বিএনপি নাম মুখে আনে। এইভাবে বিএনপিকে আসলে আওয়ামীলীগই বাঁচিয়ে রেখেছে। এতো বছর ক্ষমতায় থেকেও ভালো কাজ করে দেশের আপামর মানুষের মন জয় করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সাহস পায় না। কারণ তারা কেবল দলের সরকারই থেকেছে, দেশের সরকার হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু তো জাতির পিতা। তাকে জাতীয়ভাবে পালন না করে দলীয় সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে রেখেছেন কেন? দেশের মানুষও অকৃতজ্ঞ। যেই মানুষটা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে সেই মানুষটাকে দলীয় সংকীর্ণতার লেন্সে বিচার করে। আমরা আসলে এখনো মুক্ত হয়ে, মুক্ত বুদ্ধি দিয়ে কোনো কিছ্ইু বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি না। সব কিছুই সংকীর্ণ ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থের পিঞ্জরে বন্দি। এই বন্দি থেকে আমরা মুক্ত হবো কবে? চারিদিকে কেবল তেলবাজি আর তোষামোদি। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়