শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ০১:৪৮ রাত
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ০১:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. আহমদ আল কবির: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও জনককন্যাকে অকুণ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন

ড. আহমদ আল কবির: জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। শুধু জাতির পিতা নয়, তার পরিবারের অনেক সদস্যকে ১৫ আগস্ট শোকাবহ রাত্রিতে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ৭ বছরের শিশু সন্তান রাসলেও ছিলো। ১৫ আগস্ট আরও যারা শহীদ হন তাদের মধ্যে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনির অন্তসত্ত্বা স্ত্রীও। এসব ঘটনা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক, অমানবিক, অনৈতিক এবং কোনো অবস্থাতেই জাতির এই কলঙ্ক আমরা কোনো সময়ই দূর করতে পারবো না। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো তারা বিদেশি অর্থপুষ্ট হয়ে বিভিন্নভাবে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ছিলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করেছিলো। তাদের সাহায্যযোগিতায় সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটি অংশ এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এরজন্য জাতীয়ভাবে আমরা মনে করি, এই কলঙ্ক আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের কলঙ্ক, যার কারণে বিশ^বাসীর কাছে আমাদের সকল সময় জবাব দিতে হবে। এই কাজটি যারা করেছে তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামরিক সরকারের সময় পুরস্কৃত হয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে বা বিশে^র বিভিন্ন জায়গায় চাকরি পেয়ে তারা চলে গেছে। এভাবেই তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রের বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই অপরাধীদের এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা যারা দিয়েছে তারাও তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী হিসেবে তারা এই কাজটি করেছে। এই জগণ্যতম হত্যাকাণ্ডটির বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। এই বিচারের রায়ে কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, আর বাকিরা দেশের বাইরে আছে। তাদের দেশে ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের সকলের দাবি, এদেরকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচাররের কাঠগড়ায় নিয়ে তাদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। তাদের প্রাপ্য শাস্তি তদের অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এটা থেকে তাদের বাঁচার কোনো অধিকার নেই।

এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য একধরনের প্রতিশোধ। তার পাশাপাশি জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বিশেষ করে যে অর্থনৈতিক মুুক্তির লড়াই বাংলাদেশে তিনি ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাকের মাধ্যমে। সেই অসমাপ্ত কাজগুলোকে আমরা সকলে মিলে সমাপ্ত করতে পারলে জাতির পিতার আত্মা সন্তুষ্টি পাবে এবং আমরাও আমাদের দায়বদ্ধতাকে কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবো। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা গত কয়েকবছরে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন এবং জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিগুলো একে একে বাস্তবায়ন করছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে আমরা বিপ্লব ঘটিয়েছি এবং সেটাই জাতির পিতার প্রত্যাশা ছিলো। এখন বাংলাদেশে মঙ্গা নেই। এখন বাংলাদেশে একেবারেই হতদরিদ্র মানুষ যারা খেতে পায় না, এমন মানুষ নেই। এ ধরনের অবস্থা তৈরি করার জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন এবং নীতি-নির্ধারণী যে সমন্ত কার্যক্রম করছেন সেগুলোই আমাদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই কাজগুলোকে আরও গতিশীল করতে হবে। করোনা মহামারি অভিঘাতের ফলে এই কাজগুলো অনেকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে তবুও আমরা বিশে^র মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করেছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি এখনও এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমাদের সার্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিও এখনও ধনাত্বক, ঋণাত্বক নয়। বেশিরভাগ দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক পর্যায়ে চলে গেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের অর্থনৈতিক যে মুক্তি আসছে সেটা শোকাবহ আগস্টে জাতির পিতার প্রতি যথাযথ সম্মান বলে আমি মনে করি।

আরও একটি বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতি অনেক প্রতিহিংসার রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। যে কোনো ভালো কাজকেও নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। আগামী দিনে এগিয়ে চলার স্বপ্ন হবে দার্শনিক ভিত্তি ও নির্মাণকৌশল নিয়ে আমাদের সকলকে, সরকারি দল এবং বিরোধীদলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতির পিতার প্রতি এটাই হবে আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন চিন্তা-দর্শন ও সংকট মোকাবেলায় জনগণের ক্ষমতায়নকে অগ্রগণ্য মনে করতে হবে। এটি সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। আমরা এ ধরনের জনগণের ক্ষমতায়নকে যারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে তাদের আমাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং বাধা দিতে হবে। সকল ভালো কাজের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে, চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বললে ঠিক আছে। কিন্তু সব কাজকেই নেতিবাচকভাবে যারা দেখেন তারা এই কাজ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন এবং জনগণের কাছ থেকেও দূরে সরে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচিগুলো আমাদের সকলের জানা ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এই কাজটি আমরা এখনও পুরোপুরি করতে পারিনি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু সোনার মানুষ গড়ে তোলার তাগিদ দিতেন। আমাদের যুব সমাজকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার সংকল্প করতে হবে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে কর্মবান্ধব শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে ব্যপকভাবে যুব সমাজকে আগামী দিনের জন্য তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে। আমাদের যুব সমাজকে যদি উপযুক্ত শিক্ষা ও দক্ষতার অধিকারী করে আমরা আগামী দিনের জন্য তৈরি করতে পারি, তবেই আমাদের দেশের সুষম অর্থনৈতিক বিকাশ, নিশ্চিত সামাজিক স্থিতি ও উন্নয়ন অভিযাত্রা চলমান থাকবে। এটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকল রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে গিলে এই কাজটি জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করলে আমরা জাতির পিতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারবো।

জাতির পিতার শিক্ষা এবং তার নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অত্যন্ত সুচারুরূপে যে কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটাকে যদি আমরা আগামী দিনে আরও বেগবান করতে পারি, আমরা যদি সকলে মিলে এই কাজটি করতে পারি তবেই কিন্তু সফলতা আসবে। এবং জাতির পিতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। আমরা আজকের দিনে দেখি জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্য অমানবিকভাবে যে আত্মাহুতি দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের আমাদের এই মুহূর্তে ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের জন্য আমাদের সকলকে দোয়া করতে হবে। এবং তাদের অসমাপ্ত কাজগুলো, জাতির পিতার একমাত্র অসমাপ্ত কাজ ছিলো বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী ও স্বনির্ভর দেশ হিসেবে এবং আমাদের বঞ্চিত গরিব মানুষদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের কাজ করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে তিনি বলেছিলেন। অতএব আমাদের এগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে পেয়েছি যিনি জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণাবলী ধারণ করেন। তার সঙ্গে আমরা সকলে মিলে কাজ করবো, এটাই হবে আজকের দিনের আমাদের অঙ্গীকার এবং এই অঙ্গীকারকে সামনে নিয়ে আমরা যদি সকলে মিলে দেশটাকে গড়ে তুলতে পারি, তবেই জাতির জনকের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে। জাতিকে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, দুর্নীতি থেকে জাতিকে যদি রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আমাদের এই অগ্রযাত্রা বিভিন্নভাবে ব্যহত হবে। আমি আগেই বলেছি প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে এখন আমাদের দেশড়ার রাজনীতিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভালো কাজগুলো প্রসংশা করা শিখতে হবে। যদি কোনো খারাপ কাজ হয় বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সকলকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য কাজ করতে হবে। এটাই হবে আজকের প্রত্যাশা। জাতির পিতার প্রতি, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের স্মৃতিকে অম্লান করার জন্য আমরা বাঙালি জাতি যুগে যুগে তাদের স্মরণে রাখবো। জাতির পিতার নির্দেশিত পথে আমরা দেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো, এই প্রত্যাশাই আজকের দিনে।
পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংকের । সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আমিরুল ইসলাম

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়