শিরোনাম
◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ০৭:১০ সকাল
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ০৭:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র, অপরাধ ও স্বার্থ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যাবে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: পঁচাত্তরের পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে একসময় কিছু উশৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার আচরণ হিসেবে প্রচার করা হয়েছিলো। আবার সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট সদস্যদের হত্যা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীলনকশা হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৭তম বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সময়ে দাঁড়িয়েও আমরা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য, হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পরিকল্পনাকারী, সমর্থকগোষ্ঠী এবং নেপথ্যের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ভূমিকা, সংশ্লিষ্টতা, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো তদন্ত কমিশন দ্বারা প্রাপ্য তথ্যে অভিমত পর্যন্ত পাওয়ার চেষ্টায় করিনি। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট ফিরে আসার পর আমরা অনেক প্রতিশ্রুতির কথা শুনি, অনেক শপথবাক্য উচ্চারিত হতে শুনি কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে বা করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে হত্যার বদলা নিতে যেসব রাজনৈতিক শফথ নেওয়ার কথা শুনি সেসবেরও কোনো আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো তারা কেউই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে ন্যূনতম আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তাদের কাছে সেটি আশা করাও বাতুলতামাত্র কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৮ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে এই সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারটি সম্পন্ন করা এবং কয়েকজন দন্ডিত আসামীর রায় কার্যকর করা ব্যতিত পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের সামগ্রিকতা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করা এবং এর সকল কারণ ও রহস্য উদঘাটনের উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি, যদিও আইনমন্ত্রী প্রতি বছরই তেমন কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতির কথা আমাদের বারবার শুনিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু এ পর্যন্ত এমন একটি কমিশন গঠনে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি গ্রহণের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা সে সম্পর্কে কোনো গণমাধ্যমও কিছু বলতে পারছে না।
অথচ ১৯৭৫ সালের এই ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় অভ্যূত্থান, নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করার পেছনে লুকিয়ে থাকা সকল ধরনের অপরাজনীতি, ষড়যন্ত্র, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উচ্চাভিলাষ, স্বার্থপরতা, দন্ড, সংঘাত এবং রাষ্ট্রবিরোধী চিন্তার বৈকল্য রূপটি তৎকালীন বিভিন্ন পেশা, প্রশাসন, রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং নেতৃত্বের মধ্যে কতোখানি হঠকারিতার পর্যায়ে বিরাজ করছিলো, সেসব সম্পর্কে জানা বোঝা ব্যতীত এই হত্যকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপটি উন্মোচন, উদঘাটন এবং প্রকাশ করা মোটেও সহজ কাজ নয়।

এই হত্যাকাণ্ডে অবশ্যই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি মহলের ইন্ধন, সর্মথন সহযোগিতা এবং পরিকল্পনা বাংলাদেশের যাত্রার শুরু থেকে নেপথ্যে কাজ করে আসছিলো।

এটি মূল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অথচ এটি মূল হত্যাকাণ্ডের একটি মাত্র অংশের অবস্থান কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক এবং সরকার প্রধানের হত্যাকাণ্ড, তার পরিবার পরিজনদের নির্বিচারে হত্যা করা রাষ্ট্রক্ষমতায় অবৈধ্যভাবে খন্দকার মোশতাকের অধিষ্ঠিত হওয়া, শপথ গ্রহণের আগেই সরকারের নাম প্রচার, দেশ ও বিদেশ থেকে সর্মথন দান সেনানিবাস, বেতার, টিভি, বঙ্গভবনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উশৃঙ্খল ও বিশৃঙ্খলতায় সবাইকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিলো, সেটি প্রমাণ করে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক নানা ব্যক্তি ও গোষ্ঠি নিজেদের স্বার্থ, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীগত প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক ও পদ-পদবির উচ্চাকাক্সক্ষা, হঠকারী অতি বিপ্লবী সুবিধাবাদী বিভিন্ন মহলের অতি উৎসাহ তখন প্রকাশ্যে দেখা যেতে থাকে। তাদের অংশগ্রহণ, সমর্থন এবং স্বার্থসিদ্ধি এক্ষেত্রে গভীরভাবে যুক্ত ছিলো।

কিন্তু এর পরিণতি শুধু সরকার ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্যই নয় বিভিন্ন বাহিনী ও ব্যক্তি গোষ্ঠীর জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনার অনিবার্য অবস্থা তৈরি করেছে, যেটি- তারা তাৎখনিকভাবে বুঝতে না পারলেও অচিরেই... তাদের অনেকেই প্রাণ হারাতে হয়, তাদের উচ্চাকাক্সক্ষা তাদেরই শুধু অধপতিত করেনি, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেও চরম এক দীর্ঘ মেয়াদী বহুমাত্রিক সংকটের মধ্যে নিপতিত করেছে। আমরা সেই ভয়াবহ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিপর্যয় আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্তির স্বপ্ন অনেকটাই অধরা থেকে গেছে, শোষিতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আমরা কখনো বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো কিনা, সেটি এখন মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। এবারের ১৫ আগস্টে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কোনো করণীয় নির্ধারণ করতে পারবো কিনা সেটি দেখার বিষয়।

লেখক : শিক্ষাবিদ। অনুলিখন : আব্দুল্লাহ মামুন

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়