রাশিদ রিয়াজ : ইউএস ইন্ডিয়া স্ট্রাটেজিক এন্ড পার্টনারশিপ ফোরামের প্রেসিডেন্ট মুকেশ আগি বলেছেন ভারতের বিদেশি বিনিয়োগের জন্যে প্রযুক্তি খাতে নজর দেওয়া উচিত। তিনি বলেন ভারতের অর্থনীতির আকার বর্তমানে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে ভারত যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আগাচ্ছে তাতে বিদেশি বিনিয়োগ দ্বিগুণ করতে হবে। মুকেশ আগি ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের অন্যতম রুপকার হিসেবে পরিচিত। তার ফোরাম ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এডভোকেসি গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে। একই সঙ্গে ফোরাম ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে পর্যালোচনা করে বলেছে এখনো সিংহভাগ বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসছে। দি প্রিন্ট
তিনি বলেন এ মূহুর্তে ভারতে প্রতিবছর অন্তত বাড়তি ১শ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাহলে তা দেশটির অর্থনীতির গতি বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। মুকেশ আগি বলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বছরে ১শ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসতে পারে। প্রবৃদ্ধিকে বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নে ভারতের কী করা দরকার তা দেখা প্রয়োজন। মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে মুকেশ বলেন টিকা কূটনীতির উপর ভিত্তি করেই ভারতকে লাভবান হতে হবে। ভারতীয় কারখানাগুলি এই টিকা তৈরি করে যাতে বাকি বিশ্বের কাছে সস্তায় পাঠাতে পারে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।
গত সপ্তাহে মুকেশের ফোরাম চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছে এবং এ ফোরামের সদস্য হয়েছেন ৫শ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানির উদ্যোক্তা। চার বছর আগে ইউএস চেম্বারস অব কমার্সের নেতৃত্বের বিপরীতে কিছুটা ভিন্নমত নিয়ে ফোরামের যাত্রা শুরু হয়। তখন মুকেশ ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন যার বোর্ড সদস্যরা সবাই মিলে পরবর্তীতে ফোরাম গঠন করেন। চার বছরের মধ্যে ফোরাম ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের প্রধান ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। মুকেশ বলেন ফোরামের বোর্ড বেশ গতিশীল এবং বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করছে। চার বছর আগে আমার ও ফোরামের বোর্ড সদস্যদের লক্ষ্য ছিল দুটি দেশের মধ্যে একটি স্বাধীন ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা। যেটি দুটি দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের বন্ধন ছাড়াই স্বার্থ নিয়ে কাজ করবে। গত চার বছর ধরে এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসার খাতিরে ব্যবসা নয় এর একটি সাংস্কৃতিক লক্ষ্য রয়েছে। ভূকৌশলগত অবস্থান ও প্রযুক্তি নিয়ে ফোরাম বিশেষভাবে কাজ করছে। কারণ ভারতীয় বংশদ্ভুত মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা সাড়ে চার মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। তারা প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে। অন্তত ৮ লাখ গ্রিন কার্ডধারী রয়েছে যারা ভারতীয়। এবং এরা দুটি দেশের মধ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু তারপরও আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টনি ব্লিনকেনের ভারত সফরের উল্লেখ করে মুকেশ বলেন দেশটিতে মানবাধিকার নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। আমরা এখনো এক্ষেত্রে কাঙ্খিত মান অর্জন করতে পারিনি বলেই ব্লিনকেন মনে করেন। আমরা এ ঘাটতি পূরণে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্রমাগত সঠিক দিকনির্দেশনায় আগাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের প্রথম ৬ মাসে ভারতকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কোনো ইস্যু সমস্যা হিসেবে উঠে আসেনি। কিন্তু ভূরাজনৈতিক অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। কোয়াডের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য বিষয়ে ভারতের অনুপস্থিতি একটি ফারাক তৈরি করেছে। তারপরও মুকেশ মনে করেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভূকৌশলগত দিক থেকে খুবই শক্তিশালী ও মজবুত রয়েছে।