শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ০৮:১৭ রাত
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ০৮:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] আমদানী নির্ভরতা বৃদ্ধি পেলেও জ্বালানি মূল্য শিল্পায়নে বাধা হবে না: নসরুল হামিদ

ডেস্ক রিপোর্ট: [২] বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি বলেছেন, দেশে জ্বালানি চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশীয় উৎস থেকে তার জোগান নিশ্চিত করা যাবে না। তাই জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাস আমদানির কোনো বিকল্প নেই। এতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে জ্বালানির দাম সহনীয় থাকবে, শিল্পায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। অবশ্য এর আগে ওয়েবিনারে অংশ নেয়া আলোচকরা নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। কিন্তু নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সরকার হাটছে না।

[৩] এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত ইপি টকস অন বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি কৌশল ও আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা শীর্ষক অন লাইন অনুষ্ঠানে উপরের মতামত উঠে আসে। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি পদক চালু করা যায় কিনাÑ বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান সঞ্চালক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জনাব নসরুল হামিদ এমপি, বিশেষ অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য জনাব মকবুল ই এলাহী চৌধুরী। আলোচ্য বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইঞ্জি খন্দকার আবদুস সালেক। প্যানেলিস্ট হিসাবে যুক্ত ছিলেন বুয়েটের সাবেক প্রফেসর ড. নূরুল ইসলাম, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর, বিদ্যুৎখাতের থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটির প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম।

[৪] অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ মানুষের অধিকার তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে তা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যার পর সবকিছুর ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই ধারাবহিকতা রক্ষা করেছেন। তবে মাঝে ২১ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে গ্যাস রপ্তানির চেষ্টা হয়েছিল। তা বাস্তবায়িত হলে আজকে আমরা জ্বালানি দেওলিয়া হয়ে পড়তাম। সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত হয়েছে। এখন আমরা বলতে পারি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। গ্যাস, এলএনজি সহজলভ্য হয়েছে।

[৫] তবে সামনে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। দ্রুত টেকনলজি পাল্টে যাচ্ছে। আমাদেরও পাল্টাতে হবে। জ্বালানি খাতে উন্নতি হলেও ট্রান্সমিশনে আমরা ভাল করতে পারছি না। স্মার্ট ব্যবস্থা নেই, স্মার্ট মিটার নেই। গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকট। বিদ্যুতের অবস্থা কিছুটা ভাল।

[৬] বাপেক্সকে টেকনলজি এডাপ্ট করতে হবে। এখন বাপেক্সের ৪টা রিগ কাজ করছে। কিছুদিন আগে সামান্য পরিমাণে গ্যাস আবিষ্কার হয়েছে। তবে ডিমান্ড অনেক বেড়ে গেছে। নিজেদের গ্যাস দিয়ে চলবে কিনা ভাবতে হবে। তাই আমদানি আমাদের করতেই হচ্ছে। ডিমান্ড বাড়বে, দামও বাড়বে। তবে সেইসঙ্গে ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে।

[৭] দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের শুধু বেতন দিয়ে ধরে রাখা যাচ্ছে না। তারা পাস করেই বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে যায়। আশার কথা শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নিশিপ চালু হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নিশিপ করে সম্মানি পাচ্ছে। এতে করে দেশের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের মেধাবিরা যারা বিদেশে আছেন তাদের কিভাবে কাজে লাগান যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া চেষ্টা অব্যাহত আছে। উন্নয়নসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে ইন্টারনিশিপ বাধ্যকতামূলক করার জন্য আইনী কাঠামো করা হচ্ছে। যা শিল্পের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে। মকবুল ই এলাহি চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শুধু কৃষি দিয়ে তা হবে না। শিল্প-কারখানা লাগবে। বিদ্যুৎ লাগবে। বিদ্যুতের জন্য তেল গ্যাস কয়লা লাগবে। তাই তেল গ্যাস অনুসন্ধানে ওয়েল গ্যাস ডেভলপমেন্ট কোম্পানিকে সহায়তার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২২ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। জামালগঞ্জে কয়লা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। গ্যাস নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আমদের সস্তা গ্যাস আর সস্তা শ্রমের কারণে শিল্প গড়ে উঠেছিল।

[৮] তবে গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপক অবহেলা করা হয়েছে। ২০২৫ সালে জ্বালানি আমদানি চাহিদা দ্বিগুন আর ২০৩০ সালে চাহিদা চারগুন হবে। তখন শিল্প কারখানা কি থাকবে? আমাদের ভেবে দেখতে হবে। আমদানি করা জ্বালানি দিয়ে শিল্প চালু রাখা সম্ভব হবে না। গ্যাস সেক্টর থেকে যে আয় হয়েছে তার একটা অংশ গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। সে অর্থ দিয়ে অনুসন্ধান ও খনন করা যেতে পারে।

[৯] তিনি তেল গ্যাস অনুসন্ধানকে জোরদার করার জন্য পেট্রোবাংলায় সংরক্ষিত থাকা সকল তথ্য উপাত্ত আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা হলে দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে তারা আগ্রহী হবে। আর কেবল বঙ্গোপসাগরে নয়, গ্যাসের ২৫ শতাংশ বাড়তি দাম দিয়ে গভীর কাঠামো, উত্তরাঞ্চলে বিড আহ্বান করা উচিত। স্থল ও জলে এক সাথে বিড করা হলে অনুসন্ধানে বিনিয়োগ আসবে।

[১০] ড. নূরুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর মাত্র দুইটা দেশ সংবিধানে জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জ্বালানি পাওয়া যে জনগণের মৌলিক অধিকার তার লিখিত আকারে আছে। এর একটি অবশ্যই বাংলাদেশ আর একটি হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। যদিও এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটি এখন আর নেই। বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারি চিন্তার ফলেই এমন যুগান্তকারি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, আগেও প্রস্তাব করেছি আবারও করছি বাংলাদেশের জ্বালানিখাতে ৫০ বছরে কি হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা হোক। দলিল আকারে তা লিখিত হোক। আমদের কি সাফল্য আর আমরা কি করতে পারিনি তা সবাই জানুক।

[১১] পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৭০ এর প্রথম দিকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন গ্যাস পর্যাপ্ত ছিল। চাহিদাও তেমন ছিল না। ফলে এনার্জি সিকিউরিটি তেমন জরুরি ছিল না। তবে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালিন সময়ে সংবিধানে জনসাধারণের জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত করেছেন। যা বৃহৎ মানসিকতার পরিচয় দেয়। রূপপুর নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিল সবসময়।

[১২] গ্যাস ফিল্ড নিয়ে তখনকার ভাবনা ছিল এমন এ দেশে গ্যাস বিক্রি করে লাভ হবে না। ফলে গ্যাস ফিল্ডগুলো কেনা সহজ হয়েছে। আর এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি। দেরি হলে দাম বেড়ে যেত। খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে গ্যাসফিল্ড লিজ দিয়েছিলেন। ৫০ বছর আগে বঙ্গবন্ধু এর তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন।

[১৩] বর্তমানে এনার্জি সিকিউরিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। এখন গুরুত্ব দিতে হবে সহনীয় মূল্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি জানতেন বিদ্যুৎ উন্নয়নের প্রধান উপাদান। সংবিধানে ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যুৎ সবার অধিকার হিসাবে স্বীকৃত হয়। দুর্বাগ্যজনকভাবে তাঁর মৃত্যুর পর অগ্রযাত্রা স্থগিত হয়ে যায়। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে এক কনভেনশনে বলেছিলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া কাজ হয় না। শহরের ১৫% মানুষ সুবিধা পায় কিন্তু গ্রামের ৮৫% মানুষ বিদ্যুৎ পায় না।

[১৪] ১৯৯৬ সালে বিদ্যুৎখাতে সংস্কার এবং ব্যক্তিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রগতি হয়। তবে আমরা জ্বালানি আমদানি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। এনার্জি সিকিউরিটি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

[১৫] ড. ফিরোজ আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালে নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বলেছিলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে যেতে হবে। উৎপাদন ৪০০ থেকে ২৫০০ মেগাওয়াট করতে হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।

[১৬] এনার্জি সিকিউরিটি জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং তরল জ্বালানি সব ফর্মেই জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের জ্বালানি রিসোর্স ব্যবহার বাড়াতে হবে। রিসোর্স থেকেও কিন্তু অনেক দেশ ব্যবহার করতে পারেনি। ভেনেজুয়েলা তেমন একটি দেশ। বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করছে। তাদের স্কিল কাজে লাগালে হবে। তারা অনেক স্কিলড এবং হাইলি স্পেশেলাইজড। বাংলাদেশের টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ইনস্টিটিটিউটগুলোর কাজ করতে হবে। তারা যেন স্কিলড ম্যান পাওয়ার তৈরিতে এগিয়ে আসে।

[১৭] মূল প্রবন্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালেক সূফি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়কালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের একটি শক্ত ভিত্তি দিতে সক্ষম হলেও তার হত্যাকান্ডের পর এতে ছন্দপতন ঘটে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ডুবে যায় এই খাত। ১৯৯৬ সালে তার কন্যার হাত ধরে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে নতুন ধারার সূচনা হলেও আবার ছন্দপতন ঘটে। এই খাতে অনেক অর্জন হলেও বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া যায়নি। ফলে আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। তা আগামী দিনে সাসটেনেবল জ্বালানি সহনীয় দামে সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়