শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ০৪:২৪ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ০৬:৩৯ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] গত অর্থবছরে ১৪৩ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর

সুজন কৈরী: [২] সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) এনবিআরের আওতাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর ২৩৩টি ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করেছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। সংস্থাটি জরিমানাসহ এই ফাঁকির টাকা আদায় করেছে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার কার্যক্রম মূল্যায়নে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

[৩] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, এ উদঘাটন গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি এবং তাৎক্ষণিক আদায় প্রায় আড়াইগুণ বেশি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন হয়েছিল ৩১৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল প্রায় ৫৭ কোটি টাকা।

[৪] সুষ্ঠু করদাতাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা প্রতিরোধ, বিদ্যমান আইন ও বিধির পরিপালন নিশ্চিতকরণসহ ভ্যাট আহরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এনিআরের এই গোয়েন্দা সংস্থাটি।

[৫] ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরুর মধ্যেই করোনার বিস্তারের সময়ে ভ্যাট ফাঁকি রোধে বড় ধরনের কোনো অভিযানে নামেনি ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা। পরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হওয়ায় এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট ফাঁকি রোধে মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব আহরণকারী দপ্তরের পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে ভ্যাট গোয়েন্দা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণও পাওয়া যায়।

[৬] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর দুইভাবে এই তদন্ত করেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিক অডিট কর্মসুচি তৈরি করে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও অডিট সম্পন্ন করে। অন্যটি ভ্যাট আইনের ধারা ৮৩ অনুসারে তল্লাশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী অডিট সম্পন্ন করা হয় ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের। ৮৩ ধারায় অভিযান করা হয় ৯২টি প্রতিষ্ঠানে।

[৭] গত অর্থবছরে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালানোসহ নিয়মিত অডিটের মাধ্যমে প্রায় বিপুল পরিমাণ ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এ তালিকায় ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

[৮] ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরের চার্টার অব ফাংশন অনুযায়ী নিয়মিত অডিট পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, গোয়েন্দা তথ্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশেষ অডিট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বমোট ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এই অডিটের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অডিটে উদ্ঘাটিত টাকা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

[৯] ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, নিজস্ব জনবল, সোর্স, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ব্যক্তি বিশেষের গোপন অভিযোগপত্র ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে সরেজমিনে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও দলিলাদি জব্দকরণের মাধ্যমে প্রায় ১৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা উদঘাটিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অভিযানের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত ফাঁকির ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ৮ কোটি ৩লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

[১০] এছাড়া গত অর্থবছরে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর বিভিন্ন মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে বিশেষ জরিপ পরিচালিত হয়। এ সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ নির্দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সর্বমোট ২৫টি মার্কেটে অবস্থিত ১৫ হাজার ৪৮২টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেখা যায়, নতুন আইন অনুযায়ী ১৩ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে চলতি বছরের ২৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহের ১৭টি মার্কেট জরিপে ভ্যাট গোয়েন্দা দেখতে পেয়েছে, মোট ১ হাজার ৯৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিবন্ধন পাওয়া যায় ৫১৬ টি। বাকি ১ হাজার ৪৫৮টি ব্যবসার কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেই। অর্থাৎ অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের হার প্রায় ৭৭.৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে নিবন্ধিত ব্যবসার হার ২২.৬৪ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী মাসে ৫ হাজার টাকার উপরে ভ্যাট দিয়েছে মাত্র ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো নিবন্ধন নিয়েছে তবে তারা নামমাত্র ভ্যাট দিয়েছে।

[১১] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর পরিচালিত জরিপে মার্কেটে অবস্থিত দোকানের মালিক এবং মার্কেট এসোসিয়েশানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং তাদের আইন পরিপালনে উদ্ধুদ্ধ করেছে। চলতি বছরে এ সংক্রান্তে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আরো বেশ কিছু আলোচনা সভার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

[১২] এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার পর মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণের হার মাসে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব চলতি অর্থবছরে রাজস্ব খাতে লক্ষ্য করা যাবে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর মনে করে।

[১৩] ভ্যাট ফাঁকি রোধে নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন, কর্মকর্তাদের উদ্ধুদ্ধকরণ ও অভিন্ন নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গত অর্থবছরে অধিদপ্তর নিরীক্ষা, তদন্ত ও অনুসন্ধানের মাধমে মোট ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। যার বিপরীতে ১৪৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার তাৎক্ষণিক জমা হয়। সার্বিকভাবে এর ফলে মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।

[১৪] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি অর্থবছরেও ভ্যাট গোয়েন্দার সংস্থার এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকির আরও নিত্যনতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন এবং তা রোধে অধিকতর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়