শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২১, ০২:৫৯ রাত
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২১, ০২:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শরিফুল হাসান: লকডাউন নয়, মাস্ক ও করোনার টিকাই আসল সমাধান

শরিফুল হাসান: এই তো শ্রীলঙ্কাকে দুই মাস আগেও ২০ কোটি ডলার দিলো বাংলাদেশ। অথচ দেখেন কোভিডের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই শ্রীলঙ্কা থেকে আমরা বহু পিছিয়ে। শুধু শ্রীলঙ্কা কেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিশ্চয়ই পাকিস্তান, নেপাল কিংবা ভুটানের চেয়ে ভালো। অথচ তারাও টিকাদানে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। আর আমরা শুধু এগিয়ে মৃত্যুহারে। শুনে কষ্ট লাগে, টিকার শুরুটা ভালোভাবে হলেও সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এখন মালদ্বীপ বাদে বাংলাদেশের পেছনের রয়েছে শুধু আফগানিস্তান।

কোভিড-১৯ টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৬১ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান, প্রায় ৬২ শতাংশ। এরপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, ৯ দশমিক ৩১; ভারত ৭ দশমিক ২৪, নেপাল ৫ দশমিক ৩২ ও পাকিস্তান ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সবার পেছনে থাকা আফগানিস্তানে মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে। ভাগিস্য আমরা আফগানিস্তান থেকে এগিয়ে। প্রশ্ন হলো এখন সমাধান কী? সমাধান একটাই গণটিকা। ইতিমধ্যেই টিকা দেয়ার বয়স ২৫ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। ১৮ তে নামানো হবে। এগুলো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে এসব করার পাশাপাশি আমাদের কিন্তু পর্যাপ্ত টিকাও নিশ্চিত করতে হবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। এই যে দেখেন অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা (কোভিশিল্ড) না থাকার কারণে আমরা বহু মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে পারিনি। তারা মাসের পর মাস বসে ছিল। আশা করছি সরকার সতর্ক থাকবে যাতে সামনে এমনটি আর না হয়।

আরেকটি বিষয়। গত কয়েকদিন ধরে অন্তঃসত্ত্বাদের করোনার টিকা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমার মনে হয় এই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। আর দেশের সব মানুষ যেন টিকা নিতে আগ্রহী হয় সে বিষয়ে ইতিবাচক প্রচার চালানো উচিত। পাশাপাশি সামনে বিপুল সংখ্যক রোগী হাসপাতালে আসলে কী হবে সেই বিষয়ে দ্রুত বিকল্প ভাবা উচিত। আমার ধারণা এই আগস্ট মাসে করোনা সংক্রমণ বহু বাড়বে। এই যে দেখেন গতকালও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৪ জন। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ। শুধু জুলাই মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা, আইসিইউ ও এইচডিইউতে রোগী ভর্তি আছেন ১৩ হাজার। এর দশগুন বেশি রোগী বাসাবাড়িতে। এই বিপুল সংখ্যক লোকের যদি হাসপাতাল দরকার হতো তাহলে কী হতো? সামনেই বা কী হবে? এসব বিষয়ে দ্রুত সুরাহা প্রয়োজন। আমি মনে করি না এই দেশে আর লকডাউন কাজ করবে। কারণ লকডাউনের সবরূপই আমরা দেখেছি। সীমিত, কঠোর, কঠোর কঠোর, হালকা। দিনশেষে কিন্তু যা তাই। এই যে এপ্রিল থেকে দেশে নানানামে লকডাউন চলছে তার ফলাফল কী? আর এখন রোজ লাখো মানুষ পোশাক কারখানায় যাবে, আবার ফিরবে। লকডাউন হবে কীভাবে?

এখন লকডাউনের চেয়েও শতভাগ লোককে মাস্ক আর টিকায় আনা উচিত। এই মুহুর্তে আর কোন বিকল্প দেখছি না। বিশ্বের ৩৮৩ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই করোনার টিকা নিয়েছে। ভারতে ৪৩ কোটি মানুষ টিকা নিয়ে ফেলেছে। অথচ আমরা আটকে আছি ৪৩ লাখে। আশার কথা সরকার ৭ আগস্ট থেকে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়ার ঘোষণার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর একটা কথায় আমার কিছুটা আপত্তি আছে। তিনি বলেছেন ‘৭ থেকে ১৪ আগস্ট এই ৭ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের মানুষকে অন্তত ১ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দেশের ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সর্বত্র এই টিকা উৎসব চলবে।’

আপনাদের কাছে অনুরোধ, বিষয়টাকে যেন উৎসব বানিয়ে ফেলা না হয়। কারণ উৎসব বানালেই দেখবেন ভীড় গাদাগাদি। এর চেয়ে এই কথা বলা জরুরী যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। আসলেই টিকাই এখন বাঁচার একমাত্র উপায়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি পরিস্কার করে বলেছেন, যেসব এলাকায় টিকাদানের হার কম, সেখানে করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। কাজেই টিকার গুরুত্ব বুঝুন। আশার কথা সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, প্রয়োজনে টিকার পক্ষে আরো প্রচার চালানো হোক। কারণ এটা প্রমাণিত লকডাউন নয়, টিকাই আসল সমাধান। কাজেই চলুন আমরা সবাই টিকার পক্ষে কথা বলি। মানুষের জীবন বাঁচাই। ভালো থাকুন সবাই। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়