মোঃ মশিউর রহমান: [২] পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এনজিওকমীরা লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
[৩] ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, থ্রিহুইলার, ভ্যান, পাখিভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন।
[৪] করোনায় ধীরে ধীরে মৃতু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় অনেক মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা।
[৫] অধিকাংশ এনজিও বিবাহিত নারীদের সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে। এমন সময়ে এ সকল ভুক্তভোগী খেটেখাওয়া ঋণগ্রহীতা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে।
[৬] স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এনজিওকর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কিস্তির টাকা আদায় করছেন। এবং দেখা গেছে তাদেও মুখে মাস্ক ও নেই।
[৭] উপজেলার ভীমকাঠী গ্রামের গ্রামের ইজিবাই কচালক এনায়েত হোসেন বলেন, সে সম্প্রতি ইজিবাইক কিনেছে এ সময় তিনি এনজিও থেকে তার স্ত্রীর নামে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলো। এতে সপ্তাহে তার ১১’শ টাকা কিস্তি দিতে হয়। গাড়ি চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই আর প্রতিদিন কিছু কিছু জমিয়ে সপ্তাহিক কিস্তি দেই। লকডাউনে বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধারদেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
[৮] উপজেলার মধ্যজয়পুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রী বাবু লাল হালদার তিনি এখন মারাত্বক রোগে মৃত্যু সজ্জায় ভুগতেছেন তিনি বলেন, আমাকে রোববার ১লা আগষ্ট উদ্দিপন মাঠকর্মী মোসাঃ জায়েদা খানম কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে গালাগালি করে । আমি বলেছি, আমি ওষুধ কিনতে পারি না টাকা নাই, ঘরে চাল নাই, তার পরও সে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করে। আমি এর তিব্র নিন্দা জানাই। তারা শুধু টাকাই চেনে মানুষ বাচেঁ না মরে তার দেখার কোনো জ্ঞান তাদের নেই।
[৯] একই গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমি একজন দিন মজুরী, দিন আনি দিন খাই। এই করোনার কারণে আমার আয় ইনকাম বন্ধ। উদ্দিপনের মাঠকর্মী মোসাঃ জায়েদা খানম, আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে এবং বলেছে কিস্তি না দিলে পিঠমোড়া দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে কিস্তি আদায় করব। এক পর্যায় আমি ধার করে কিস্তি দিয়েছি। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
[১০] এ বিষয়ে উদ্দিপনের ম্যানেজার সুমন বলেন, লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা হতে দেড়টা পর্যন্ত কিস্তি আদায় করার নির্দেশ আছে যারা দিতে সমর্থ। তবে কারো উপর জোড় জুলুম করা যাবে না এবং স্বস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমার কোনো মাঠকর্মী যদি এমন করে তা হলে আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
[১১] উপজেলা সমবায় অফিসের সহকারি পরিদর্শক মোঃ মিরাজুল ইসলাম বলেন, সমবায়ের আওতায় যতো এনজিও আছে আমারা তাদেরকে এই লকডাউনে কিস্তি আদায় করতে নিষেধ করেছি। যদি কেউ কিস্তি আদায় করে তা হলে আমারা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবসন্থা গ্রহণ করব।
[১২] নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, এনজিও কিস্তি আদায়ের বিষয় এবার আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তারপরেও মানবিক কারণে জবরদস্তি করে আদায় না করা সমীচিন। যারা দিতে সমর্থ তাদের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সম্পাদনা: হ্যাপি