লিহান লিমা: [২] মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনা শাসন প্রতিষ্ঠার ছয় মাস কেটে গেলেও এখনো জনরোষ দমাতে হিমশিম খাচ্ছে সেনাবাহিনী। দেশটির রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে, সাধারণ মানুষের মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে এবং দেশটিতে মানবিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউএননিউজ
[২]মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবিক এবং আবাসিক সমন্বয়ক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তা রামনাথন বালাকৃষ্ণ বলেন, ‘মিয়ানমার এখনো পুরোপুরিই অস্থিতিশীল, দেশটির আর্থ-সামাজিক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্রম-অবনতি হচ্ছে এবং এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ।’ শান, চিন ও কাচিন রাজ্যসহ বেশ কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের চলমান প্রকৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এইসব স্থানে ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রাখাইন রাজ্যেও বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বাড়ছে। অভ্যূত্থানের পর আরো ২০ লাখ মানুষের জরুরী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয় শহরাঞ্চলে। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের তীব্রতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত শতশত মানুষকে মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মিয়ানমারে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারওপর দেশটির সেনাবাহিনী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে।’
[৩]বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সেনবাহিনীর ওপর কয়েক দফার নিষেধাজ্ঞারোপ করলেও যদি ২০১১ সালে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারে ফেরার পূর্ববস্থায় বহাল থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করা হয়, তাহলে বিদেশী কোম্পানিগুলো নিজেদের মার্কিন ব্যবসা সুরক্ষা করতে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হবে। পশ্চিমা কূটনৈতিকরা বলছেন, জো বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত এটি করবে না কারণ তা মিয়ানমারকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ করবে। নিক্কি এশিয়ান রিভিউ
[৪]তবে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংঘর্ষ এবং মহামারী দেশটির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। অনেক বিদেশী কোম্পানি মিয়ানমারের কার্যক্রম বাতিল করেছে। সেনবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই দেশটির জীবনযাত্রা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে জনগণ বিধি-নিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে। গত ছয় মাসে মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াতের মান ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সেই সঙ্গে চাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[৫] মিয়ানমারে বেসামরিক ছায়া সরকারের প্রধান ডাক্তার সাশা অনলাইন সাক্ষাতকারে আল জাজিরাকে বলেন, ‘তাদের অভ্যূত্থান ব্যর্থ, তারা ব্যর্থ শাসক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা অর্থনীতি- সরকারের কোনো কাজ তারা করতে পারছে না।’ সাশার সমালোচনা প্রতিফলিত হয়েছে গত ২৬ জুন প্রকাশিত হওয়া বিশ্বব্যাংকের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশটির অর্থনীতি এ বছর ১৮ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং অভ্যূত্থান ও মহামারী এই দুয়ের প্রভাবে দারিদ্র দ্বিগুণ হবে। আল জাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :