শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০১ আগস্ট, ২০২১, ০৪:২২ সকাল
আপডেট : ০১ আগস্ট, ২০২১, ০৪:৪৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বড় পরিসরে হচ্ছে না ফিল্ড হাসপাতাল: করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হবে বেসরকারি হাসপাতাল

নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর চাপ সামাল দিতে সারাদেশে ফিল্ড হাসপাতাল করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, তা থেকে কিছুটা সরে এসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ। আপাতত ঢাকার বাইরে কোনো ফিল্ড হাসপাতাল হচ্ছে না। শুধু রাজধানীতে একটি হবে। তবে ঢাকার বাইরে ফিল্ড হাসপাতালের পরিবর্তে মানসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন এবং জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বা-বধায়কদের এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত রোগী সংকুলান করা সম্ভব না হলে পার্শ্ববর্তী মানসম্পন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চিকিৎসায় যুক্ত করা যাবে। সরকারিভাবে রোগীর যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে। এজন্য দু'পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করে নিতে হবে।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকায় পাঁচটি এবং দেশের অন্যান্য স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী ফিল্ড হাসপাতাল করার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত ঢাকায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। সেটি প্রস্তুত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে ঢাকায় আরও একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি তিনটির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ফিল্ড হাসপাতাল করতে হলে ভবন, যন্ত্রপাতি ও জনবলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাতারাতি এগুলোর জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ চিকিৎসা সরঞ্জামের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় গেলেও এসব যন্ত্রপাতি আমদানি ও হাসপাতালে স্থাপনের জন্য কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। ভবন ও যন্ত্রপাতি সমস্যার সমাধান করলে জনবল নিয়ে সংকট তৈরি হবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে এমনিতেই জনবল সংকট রয়েছে। যে জনবল রয়েছে তাদের অধিকাংশই দেড় বছর ধরে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত থেকে অনেকটাই ক্লান্ত। আবার নতুন করে জনবল নিয়োগ দেওয়াও সময়সাপেক্ষ। এসব বিষয় চিন্তাভাবনা করে ব্যাপক পরিসরে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে রোগীর চাপ সামলাতে বেসরকারি মানসম্পন্ন হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অধ্যাপক খুরশীদ আলম জানান, বর্তমানে কুমিল্লা ও সিলেটে সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালে রোগীর চাপও তৈরি হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে মানসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজকে চিকিৎসায় যুক্ত করে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যেভাবে বাদ গেল ফিল্ড হাসপাতাল : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তবে তিনি কোথায় কয়টি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এরপর গত ৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব কনভেনশন সেন্টার পরিদর্শনে দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিঞা ঢাকায় বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারসহ পাঁচটি স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের ঘোষণা দেন। অন্য চারটি ফিল্ড হাসপাতাল কোথায় স্থাপন করা হবে সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি সচিব। পরদিন ১০ জুলাই পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারে এক হাজার ২০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের ঘোষণা দেন। কিন্তু অন্য চারটি ফিল্ড হাসপাতালে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও কিছু বলেননি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম ও পুলিশ কনভেনশন সেন্টার, গুলশানের শুটিং ক্লাবের ভবন এবং টিকাটুলীতে এফবিসিসিআইর ১৩ তলার একটি ভবনে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের জন্য পাঁচটি স্থাপনা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। বিশেষ করে ভবনগুলোতে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে রোগী চিকিৎসার উপযোগী করতে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। দ্রুততম সময়ে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে রোগী চিকিৎসার উপযোগী করা সম্ভব হবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বড় পরিসরে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।

একটি চালুর প্রস্তুতি :আপাতত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ১৪ জুলাই বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এই ফিল্ড হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে বরাদ্দের টাকা ছাড় করা হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় কেনাকাটা সময়সাপেক্ষ। দ্রুততম সময়ে হাসপাতালটি চালু করতে হলে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। এজন্য সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। ওই অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ে যন্ত্রপাতি ক্রয় করে হাসপাতালটি চালু করা হবে।' তবে কবে নাগাদ হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, দ্রুতই এই হাসপাতালটি চালু হচ্ছে না। কারণ গত সপ্তাহের শেষ দিকে হাসপাতালটির যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৬ কোটির কিছু বেশি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এখন সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় কেনাকাটা করার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। ওই অনুমোদন পেতে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এরপর আগামী সপ্তাহে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ক্রয়কৃত ওই সব সামগ্রী পেতে আরও তিন থেকে চার সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে। যন্ত্রপাতি আসার পর তা স্থাপন করতে হবে। সব দ্রুততম সময়ে হলেও হাসপাতালটি চালু হতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে।

বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারের বাইরে ঢাকার গুলশান শুটিং ক্লাব ভবনে আরও একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, গুলশান শুটিং ক্লাব ভবনটি কী প্রক্রিয়ায় হাসপাতালে রূপান্তর করে রোগীর চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে সেটি যাতে দ্রুততম সময়ে চালু করা যায়, তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অন্য যে তিনটি ভবনে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে সেগুলোকে আবারও বিবেচনায় আনা হতে পারে।

সরকারি পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের কথা সবাই বলে আসছে। কিন্তু দেড় বছর সময় পেয়েও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণ হয়নি। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনার অভাব। অথবা তারা চিকিৎসা সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়নি। অথচ রোগীরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও শয্যা পাচ্ছেন না। আবার পরিকল্পনা ছাড়াই ফিল্ড হাসপাতাল চালুর ঘোষণা দেওয়া হলো। সবকিছু চূড়ান্ত না করে ৩১ জুলাই থেকে চালুর কথা জানানো হয়েছে। আবার অন্যান্য ফিল্ড হাসপাতালগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়