খান আসাদ: সম্প্রতি নারী খেলোয়াড়দের পোশাক নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। নারী-পুরুষের পোশাক বৈষম্য ও পোশাক ‘আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। বাঙালি মুমিন সাংবাদিকেরা এই প্রসঙ্গকে ‘যৌন’ প্রসঙ্গ বানিয়ে ফেলেছে। সমানাধিকারের জন্য প্রতিবাদ হয়ে যায়, ‘যৌনকরনের’ প্রতিবাদ। তেঁতুল হুজুরদের প্রভাব কাটানো বড়ই কঠিন। ডয়েচে ভেলের বাংলা সংবাদের শিরোনাম ‘হাত-পা ঢাকা পোশাক পরে জার্মান জিমন্যাস্টদের প্রতিবাদ : খেলাধুলায় নারীর ‘যৌনকরণের’ প্রতিবাদ জানাতে রোববার জার্মানির চার নারী জিমন্যাস্ট হাত-পা ঢাকা পোশাক পরে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন৷’ মানে, হাত-পা দেখানো হচ্ছে, ‘যৌনকরন’। শিরোনাম দেখে মনে হবে, যেন নারী খেলোয়াড়রা হাত পা ঢেকে, (বাঙালি মুমিনরা পড়ুন হিজাব পরে) ‘যৌনকরনের’ প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু ডয়েচে ভেলের সংবাদ যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন, প্রতিবাদটি কি নিয়ে তা কিছুটা আঁচ করা যায়। খেলোয়াড়দের ভাষ্য : ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, সবাই আরাম অনুভব করছে এবং আমরা সবাইকে দেখাতে চাই যে, তারা যা চায় তাই পরতে পারে এবং এতে তাদের সুন্দর দেখাবে, তাদের দারুণ অনুভূতি হবে, সেটা লম্বা লেওটার্ডই হোক কিংবা ছোট’৷
জার্মান জিমন্যাস্ট এলিজাবেথ জাইৎস ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘আমি চাই যেকোনো খেলায় মেয়েদের তাদের ইচ্ছেমতো পোশাক পরার সুযোগ থাকুক৷’ মানে, পোশাকের ক্ষেত্রে যে ‘নিয়ম’ বা ‘আইন’ আছে, সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মানে, খেলোয়াড়দের পোশাকের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রতিবাদ। কেন নারী খেলোয়াড়দের পোশাক আইন না মানার প্রতিবাদ? কারণ পোশাকের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্নে, নারী ও পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়েছে, তা বদলানোর জন্য। বিস্তারিত জানার আগে, প্রথম আলোর সংবাদ দেখে নিই।
প্রথম আলোর শিরোনাম, ‘অলিম্পিকে ‘যৌন আবেদনময়তা’র বিপক্ষে বার্তা জার্মানদের।’ পোশাকের স্বাধীনতার প্রশ্ন হয়ে গেছে, প্রথম আলোর মুমিন সাংবাদিকের ভাষায় ‘যৌন আবেদনময়তা’। হায়রে মুমিনিয় যৌনবাদিতা! সম্ভবত, সেক্সিজমের এর অনুবাদ এদের কাছে ‘যৌনআবেদনময়তা’। সেক্সিজম মানে যে লিঙ্গীয় বৈষম্য, এই জ্ঞানেরও অভাব। খেলোয়াড়রা যখন সেক্সিজমের প্রতিবাদ করে, তা হচ্ছে লিঙ্গীয় কারণে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রতিবাদ, সমানাধিকারের জন্য। মুমিনেরা নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রশ্নটাকে ‘যৌনআবেদন’ মনে করেছে। তেঁতুলিয় মনোজগত!
গোটা ব্যাপারটার শুরু কীভাবে? পোশাক বা খেলোয়াড়দের ‘ইউনিফর্ম’ নিয়ে ঝামেলার কাহিনিটি কি? নরওয়ের বিচ হ্যান্ডবল টিমের মেয়েদের পোশাক ঠিক মাপমতো ছিলো না। একটু বড় ছিলো। ফলে, তাঁদের ইউনিফর্ম নিয়ম ভাঙ্গার জন্য শাস্তি স্বরূপ জরিমানা করা হয়। আবার অন্যদিকে, বৃটিশ একজন নারী খেলোয়াড়কে এক কর্মকর্তা বলে যে তাঁর পোশাক অনেক ছোট। একজন সাঁতারু নারীকে ক্যাপ পরার অনুমতি দেওয়া হয় না, কারণ তাঁর ঘন কালো চুল। নারী খেলোয়াড়দের পোশাক নিয়ে এই সব মাতব্বরি নারী খেলোয়াড়রা অপছন্দ করে। কারণ, কোন পুরুষ খেলোয়াড়দের পোশাক নিয়ে এরকম কোন মাতুব্বরির ঘটনা নেই। ফলে, লিঙ্গীয় কারণে বৈষম্য হচ্ছে, এই অভিযোগ উথাপিত হয় এবং নারী খেলোয়াড়রা পোশাক নিয়ে মাতুব্বরির প্রতিবাদ করে।
সমস্যাটা শরীর দেখানো বা না দেখানোর কোনো বিষয় না, মুমিন সাংবাদিকেরা যেভাবে বাঙালি পাঠককে ‘হিজাবি সংবাদ’ পরিবেশন করছে। বিষয়টা ব্যক্তি স্বাধীনতার, পোশাকের স্বাধীনতার, খেলাবাণিজ্যের পুলিশদের তথা কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতার। প্রতিবাদটি নারীর পছন্দের অধিকার তথা মানবাধিকারের জন্য। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :