জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: হুমায়ূন আহমেদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বাণী আছে একজন মানুষ আরেকজনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে কেবল অচেনা অবস্থায়! ভেবে দেখেন, কথাটা কি ঠিক না? আপনি যদি আবিষ্কার করেন আপনার বন্ধুর বাবা, এতোদিন ধরে যে লোককে আঙ্কেল ডেকেছেন সেই লোক একটা ঘুষখোর এবং আপনি এই সত্যটা প্রকাশ করে দেওয়ার কারণে আপনার বন্ধু প্রাণের শত্রু হয়ে গেছে তখন বন্ধুত্বের দায় কার? সত্যটার নাকি আপনার এতোদিনের পাতানো বন্ধুত্বের?
আমার প্রিয় লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলো তার টাইপ রাইটার। দিনের পর দিন না লিখতে পারার ডিপ্রেশনে এই নোবেলজয়ী লেখক সুইসাইড করেছিলেন। তখন কি আমরা সেই ডিপ্রেশনে ফেলা টাইপ রাইটারকে ফাঁসি দিতে পেরেছি? যেকোনো লেখক, শিল্পীর যে কিনা সত্য বলে তার আসলে সেই অর্থে কোনো বন্ধু নেই! বিশ্বাস হচ্ছে না তো? মার্টিন লুথার কিংয়ের একটা বিখ্যাত বাণী আছে, সবকিছুর শেষে আমরা শত্রুদের বাক্য মনে রাখবো না, কিন্তু বন্ধুদের নীরবতা মনে রাখবো! বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নিয়ে প্রতিবাদ করার সময় আমার সমস্ত সহপাঠীরা সিনিয়রদের ভয়ে চুপ করে থেকেছে, দিনের পর দিন কথা বলেনি। কারণ তাদের ধমক দিয়েছিলো সিনিয়ররা।
বুয়েটের আবরারকে মেরে ফেলা সম্ভব হয়েছে কেন জানেন? কারণ ২০১১ রুমের ভেতর যা হচ্ছিলো সেটাকে প্রথম চাপা দিয়েছিলো তার বন্ধুরা! বন্ধু ঘরের মধ্যে কাঁদছে, তাকে পেটানো হচ্ছে জেনেও কি তারা চুপ থাকেনি? কয়দিন আগে এক কার্টুনিস্ট বন্ধু হয়েছিলো। তারও ওই এক ধান্ধা, কেমন করে পটানো যায় কিংবা প্রেম করা যায়! যখন দেখেছে ওইসব হবে না, তখন আমি ঢুকে গেছি ব্লকলিস্টে। এমনকি আমার বড় ভাইবোনরা যখন তাদের বন্ধুদের কথা বলে গর্ব করে তখন আমি হাসি। কারণ অনেক বন্ধুই ইনবক্সে তাদের সুন্দর চেহারা দেখিয়ে ফেলেছে, অনেকে হয়তো বলে দেবো বলে ভয়ে আছে। কী দরকার এইসব বন্ধুত্ব ভেঙে দেওয়ার? আমি হাসতে হাসতে আবিষ্কার করেছি- দুনিয়ায় নিজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু কেউ হতে পারে না! যে মানুষ নিজের বন্ধু হতে পারে তার সাহায্য পেতে সময় লাগে না। কেবল সে নিজেকে মার্ক টোয়েনের মতো করে বলতে পারে- বন্ধুর জন্য প্রাণ দেয়াটা কঠিন না। কঠিন হচ্ছে প্রাণ দেয়ার মতো একজন বন্ধু পাওয়া! এই যে বন্ধুত্ব নিয়ে এতো গর্ব করছেন। ভেবে দেখেন- আপনার জীবনে প্রাণ দেওয়ার মতো বন্ধু একজন আছে তো? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :