শিরোনাম
◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে

প্রকাশিত : ০১ আগস্ট, ২০২১, ০২:৫৫ রাত
আপডেট : ০১ আগস্ট, ২০২১, ০২:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. সেলিনা সুলতানা: ‘ঘটনা সত্য’ নাটক, বিশেষ শিশুদের বাবা-মা এবং গণমাধ্যম

ডা. সেলিনা সুলতানা: সংস্কৃতমনা মানুষেরা ও নাট্যকর্মীরা যদি সংবেদনশীল না হন, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী সুযোগ্য কন্যা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এসব বিশেষ শিশু বা ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য, সেসময় মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের এরকম নেতিবাচক কাজ খুবই দুঃখজনক। যখন একটি নাটকের মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়Ñ প্রতিবন্ধী শিশুরা পৃথিবীতে আসে বাবা-মায়ের ‘পাপ কর্মের ফলে’, তখন তাদের শিক্ষা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, প্রশ্ন ওঠে পুরো সমাজের নৈতিক অবস্থান নিয়ে। এরকম রুচিহীন উপস্থাপনা অনেক বিশাল অর্জনকেই খাটো করে দেয়।

সত্য বলে তারা যে বিষয়টি প্রচার করেছেন, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং তা অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা একটি অপপ্রচার মাত্র। যা অনেক আগের একটি ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী এবং কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে যে এক যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের মন মানসিকতার অবস্থা আরও ভালোভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলছেন, এটি অসাবধানতাবশত ঘটেছে। তাহলে ধরে নেয়া যায় আমাদের নাট্যজগতের লোকজন নাটক লিখেন, প্রচার করেন, নাটকে অভিনয় করেন অসাবধানে? দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সংশ্লিষ্টরা যে অন্যায় বার্তা সমাজকে দিয়েছেন এর জন্য শুধু দুঃখপ্রকাশই যথেষ্ট নয়। অভিনয় শিল্পীসংঘ জানিয়েছে, নাটকটির আপত্তিকর সংলাপের বিষয়ে তার জানতেন না। এ নাটকের প্রধান দুই শিল্পী অভিনয়ে অবশ্যই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তারা তাদের অভিনয় এর বিষয়বস্তু না জেনেই কাজের সম্মতি প্রদান করেছেন এটা জেনে আশ্চর্য হতে হয় বৈকি!

পুরো নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধর্মান্ধ, অবৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও সমাজের একটি বিশেষ অংশকে ছোট করে, অসম্মান করে। সেই নাটক নির্মাণের জন্য কোন ক্ষমা নেই। যিনি তার বিকারগ্রস্ত ও অপরিপক্ক মস্তিষ্ক থেকে এই নাটক লিখেছেন তার কোন ক্ষমা নেই! যিনি এই নাটকের চিত্রনাট্য পরিচালনা করেছেন, তাদের ভাষায়- না জেনে, না বুঝে, না পড়ে, তার কোন ক্ষমা নেই! দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের ভুল বার্তা দিতে পারেন না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর ৩৭-এর ৪ ধারা বলছে, ‘কোনো ব্যক্তি পাঠ্যপুস্তকসহ যেকোনো প্রকাশনা এবং গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর ধারণা প্রদান বা নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যঙ্গ করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

‘ঘটনা সত্য’ নাটকে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে,তা ও আমাদের সামাজিক বিশ্বাস অনেকাংশে এক। মুখে যতো কথাই বলা হয় না কেন, মানুষ অন্তরে এটাই বিশ্বাস করে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পরিবারে একটি সন্তান থাকে বা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে তার বাবা-মার যে কঠিন জীবন যাপন সেটা নিজে থেকে অবলোকন করে।

মানুষের মধ্যে থেকে অন্ধবিশ্বাস দূর করতে ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। এটা সবার লড়াই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েছে বর্তমান সময়ে। মানুষিকতা কতো নিচে নামলে এরকম একটি নাটক বানানো সম্ভব! ধন্যবাদ জানানো দরকার তাদেরকে, ভুলটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে নাটক সংশ্লিষ্টরা অনেকই ক্ষমা চেয়েছেন। আর তারা যদি ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এগিয়ে আসেন সেটা হবে আরো খুশির ব্যাপার। ঈষৎ সংক্ষেপিত।
লেখক : কনসালটেন্ট, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক, স্পেশালিস্ট ইন নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম, বেটার লাইফ হসপিটাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়