শামীম আহমেদ: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশে যে ধরনের লকডাউন দেওয়া হচ্ছে, তা করোনা প্রতিরোধে অকার্যকরী, অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের লকডাউন গরিববিরোধী, অন্যায্য ও অসমতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। আমি আরও মনে করি, বাংলাদেশে লকডাউনের কারণে করোনার সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হবে। আমি মনে করি কার্যকরী লকডাউন করার জন্য যেই পরিমাণ অর্থনৈতিক সামর্থ্য একটা সরকারের থাকা দরকার, তা বাংলাদেশের নেই। আমি মনে করি একটি দেশের ভৌগলিক সীমারেখা ও জনসংখ্যার যে অনুপাতে লকডাউনের ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো সম্ভব, তা বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, জায়গা কম, লকডাউনে এলাকাভিত্তিক, এপার্টমেন্টভিত্তিক, বাড়িভিত্তিক করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়। মানুষ উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিতে যেতে পারে না, ঘরে ঘরে, এপার্টমেন্টে বা পাড়ায়-মহল্লায় প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে পারে না, ফলশ্রুতিতে করোনার সংক্রমণ আপাত দৃষ্টিতে কম মনে হলেও নিরবে ছড়াতে থাকে এবং লকডাউন পরবর্তী সময়ে আরও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পায়।
লকডাউনে মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে লকডাউনের পরে তারা ক্ষতি এড়ানোর জন্য আরও বেশি কাজ করতে চায়, বেশি মানুষের সাথে মেশে এবং করোনার সংক্রমণ বাড়ায়। লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শিক্ষাখাতের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ভয়াবহ পরিণাম আগামী দশ বছর ধরে আমাদের ভোগাবে। করোনা প্রতিরোধে একমাত্র উপায় ভ্যাক্সিনেসন। লকডাউন প্রত্যাহার করে মানুষকে বিভিন্ন অফিসে রোটেসন করে কাজ করতে দিন, অর্ধেক অফিস, অর্ধেক বাসা থেকে কাজ করতে দিন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলুন। ভ্যাক্সিন নেবার জন্য অফিস-আদালত-কারখানা, স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক মোবাইল সেন্টার খুলুন। লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :