শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল
আপডেট : ৩০ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিয়ে সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক: ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির অনেক লক্ষ্যই বাস্তবায়ন হয়নি। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনাসৃষ্ট দুর্যোগ। মহামারীর সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনো কমেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার। বিপর্যয়কর এ পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বণিক বার্তা

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও একই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর নীতিছাড়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে উদারতা দেখিয়েছে, তা অব্যাহত থাকছে চলতি অর্থবছরেও। ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয়ে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে আমদানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, চলতি অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এতে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১১ শতাংশ। আর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে গভর্নর ফজলে কবির জানিয়েছেন।

মুদ্রানীতি ঘোষণার বক্তব্যে ফজলে কবির বলেন, আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি, যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিতে একটি আতঙ্কময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত নীতিসহায়তার ফলে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ও তরল সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যদিও মহামারীর প্রভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি এখনো প্রয়োজনীয় মাত্রায় ঘুরে দাঁড়ায়নি। এ পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব বাজেটে ঈপ্সিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য সামনে রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতির ভঙ্গি এবং অর্থ ও ঋণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।

গভর্নর বলেন, করোনার প্রভাবে মানুষের হাতে নগদ অর্থ ধরে রাখার প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য অর্থপ্রবাহের গতি নিম্নমুখী থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাপক অর্থ সরবরাহ (এম-২) বৃদ্ধির বার্ষিক নিরাপদ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। এজন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে নিট ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে। আর বেসরকারি খাত থেকে জোগান দেয়া হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বলা হয়, সরকারের চলতি হিসাবে ২৫৭ কোটি ডলার ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ৫১০ কোটি ডলার। দেশের ব্যাংক খাতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অতিরিক্ত তারল্য নিয়েও সতর্কতার কথা বলা হয়েছে মুদ্রানীতিতে। এ বিষয়ে বলা হয়, উৎপাদনশীল খাতের পরিবর্তে উদ্বৃত্ত তারল্য অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহূত হয়ে যাতে সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সজাগ রয়েছে। এজন্য পরিস্থিতি বিচারে বাজার থেকে অলস তারল্য তুলে নেয়ার আভাসও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে প্রণোদনার ঋণ যাতে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহূত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে ৭৭০ কোটি ডলার কিনে নেয়ার বিষয়টিও গভর্নর তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।

মহামারী থেকে দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষায় গত এক বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ফজলে কবির। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে যেসব বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হয়। গভর্নর বলেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এরই মধ্যে গৃহীত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি জোরদার করা হবে। অর্থনীতির অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতগুলো যেমন কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প, রফতানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য এরই মধ্যে গৃহীত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বর্ধিতকরণের পাশাপাশি করোনার কারণে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলো যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করা হবে।

নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এবং তফসিলি ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার ১ শতাংশ নিয়ে গঠিত স্টার্টআপ ফান্ডের আকার পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, সিএমএসএমই খাতগুলো, বিশেষ করে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাস্টার অ্যান্ড ভ্যালু চেইন এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকের অর্থায়ন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম কার্যকরভাবে চালু করা হবে। অর্থনীতিতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকগুলোর ন্যূনতমসংখ্যক নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর উপশাখা খোলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপের কথাও গভর্নর উল্লেখ করেছেন।

মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যপ্রয়াত সাবেক গভর্নর খোরশেদ আলমের কথা স্মরণ করেন। গভর্নর বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ জনসহ ১৫৩ জন ব্যাংকার মারা গেছেন। আমি মৃত্যুবরণকারী ব্যাংকারদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

ঘোষিত মুদ্রানীতি গতানুগতিক: ডিসিসিআই

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিকে কম-বেশি সম্প্রসারণমূলক, সংকুলানমুখী তবে গতানুগতিক ধারার বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। এতে বলা হয়, ২০২২ সাল নাগাদ সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আশাবাদ জাগানো। কিন্তু করোনার কারণে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না বিধায় ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। সামগ্রিক অর্থনীতি এবং বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে।

ডিসিসিআই তার বিবৃতিতে বলেছে, সিএমএসএমই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে আর্থিক প্রণোদনাসহ অনেক ধরনের নীতিসহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘোষিত মুদ্রানীতিতে প্রদত্ত সুবিধাদি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তেমন দিকনির্দেশনা বা রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। ঘোষিত মুদ্রানীতিটি কিছুটা গতানুগতিক ও ধারাবাহিক। এ নীতিতে বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করতে উদ্ভাবনী কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। তবে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার সমন্বয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নজরদারি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়