বিপ্লব বিশ্বাস: [২]প্রায় প্রতিনিয়তই কৌশল পালটাচ্ছে মদক কারবারীরা। এমনি যে সব সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায়ই মাদকের চালান ঢুকছে। মাঝে মধ্যে সে পথও পরিবর্তন করছেন মাদক ব্যবসায়িরা। তবে এখনো বড় বড় মাদকের চালান কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত সমুদ্র পথ দিয়েই ঢুকছে। একই ভাবে মাদক আইসের( ক্রিষ্টাল মেথ) চালানও ঢুকছে একই পথে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাদক সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে এসব চালান দেশে নিয়ে আসছে।
[৩] সীমান্তে দায়িত্বরত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বেশ কিছু মাদক জব্দ করতে সক্ষম হলেও আড়ালে বড় চালানগুলো খালাস হচ্ছে এমন ধারণা স্থানীয়দের।
[৪]জানা যায়, মাদককারবারিরা একসময় শুধু ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে এনেছে। সম্প্রতি ইয়াবার পাশাপাশি আরেক ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের চালানও দেশে ঢুকছে। প্রথম দিকে আইস অপরিচিত হওয়ায় কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে কয়েকটি চালান পাচার করেছে।
[৪]গত দেড় বছরে রাজধানী ঢাকায় আইসের অন্তত চারটি চালান জব্দ করা হয়। সব শেষে পিরোজপুর জেলায় রাজ নামক এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৫] অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মাদকের প্রধান রুট টেকনাফ। গত ৩ মার্চ টেকনাফে দুই কেজি আইসসহ মো. আবদুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেপ্তারও করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) টেকনাফ বিশেষ জোনের সদস্যরা। উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত আইসের আনুমানিক মূল্য ছিল ৩ কোটি টাকা। পরে ১৩ এপ্রিল টেকনাফ শীলখালী চেকপোস্টে তল্লাশি করে বিজিবি সদস্যরা ১৬৭ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেন
[৬]গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, দেশে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড বা এলএসডি মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে ১৫টি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করার পুলিশের কাছে এমন তথ্য আসে।
[৬] অন্য দিকে, গত ৩০ মে রাতে পল্টন থানায় আয়োজিত এক সংবাদ ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ বলেছিলেন শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভয়ঙ্কর মাদক ২ হাজার মাইক্রোগ্রাম এলসডি, আইস ও গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা আসক্ত হয়ে এলএসডি সেবন শুরু করে। মূলত বিদেশ থেকে এলএসডি মাদক সংগ্রহ করে তারা।
[৭]রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে যারা এলএসডি বিক্রি করে আসছে। গ্রুপগুলো গত এক বছর ধরেই এই এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, মূলত ইউরোপ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতো। তবে এখোন সমুদ্র ও নদীপথেই এই মাদকের নুতন আরেকটি রুট হিসেবে জানা যায়।
[৮]অন্যদিকে, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা যায়, দক্ষিণঞ্চালে নৌ পথে ঢুকছে ক্রিষ্টাল মেথ আইস বারের চালান। কুয়াকাটা হয়ে ভোলা, পায়রা বন্দর থেকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পরেছে এই মাদক। মূলত পিরোজপুর গ্রেপ্তার মাদক সম্রাট রাজ এর দেয়া তথ্যে এসব জানতে পারেন তারা। বর্তমানে এই আইস বারের ব্যবসায় পিরোজপুর জেলা পরিষদের একজন সদস্য, পৌর কাউন্সিলরসহ বেশ কয়েকজনর নাম। দুই গডফাদারের নাম শুনে তারা রিতিমত বিম্ময় প্রকাশ করেন।
তবে এ ব্যপারে র্যাব কাজ করছে।
[৯]র্যাবের সৃত্রগুলো বলেছে, পিরোজপুরসহ তিন থানায় বেশ কয়েকজন মাদক কারবারী এবং সেবনকারীর নাম পাওয়া গেছে। সাধারণত এই মাদক আইস বার উচ্চবিত্তদের মাঝে চাহিদা বেশি।
(৯)অপর একটি সূত্র বলেছে, রাজকে আদালতের অনুমতি নিয়ে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এ ছাড়া রাজ জেলে থাকা অবস্থায় তার সাথে এ পযর্ন্ত কতজন কারাগারে দেখা করেছেন। তাদের ও একটা তালিকা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
[১০]ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, আইস বার একটি ভয়ংকর নেশা। আমারা এর বিরুদ্ধে একহাটটা হয়ে কাজ করছি। সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলে ক্রিষ্টল মেথ নিয়ে ধরা পড়া রাজের সহযোগীদের ব্যপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। খুব শিঘ্রই এর গডফাদাররা আইনের আওতায় আসবে।