শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২১, ১১:২৮ রাত
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২১, ১১:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কামরুল হাসান মামুন: আমি সত্যিই নির্বাক!

কামরুল হাসান মামুন: গতকাল দুজন শিক্ষক সম্মন্ধে জানলাম। এর একজন হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার (মুকুল) আর অন্যজন হলেন নটরেডেম কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম সম্মন্ধে। দুটোর একটি যদি হয় উত্তর মেরুর তাহলে অন্যটি হলো দক্ষিণ মেরুর। আগে প্রথমটির সম্মন্ধেই বলি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুল ও এক অভিভাবকের মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপে মুকুলের কথাবার্তা শুনে আমি সত্যিই নির্বাক! ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে অধ্যক্ষ ওই অভিভাবককে বলেন, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো শু...র বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব, আমি শুধু ভিকারুননিসা না আমি দেশছাড়া করব।’ কথোপকোথনের এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ বলেন "কামরুন নাহার: কোন ... পোলার কী যায় আসে? আমি রাজনীতি করা মেয়ে আমি কিন্তু ভদ্র না।" এইরকম অশ্লীল, দাম্ভিবকতাপূর্ণ মাস্তানি মার্কা কথাবার্তায় ভরা পুরো ফোনালাপ ব্যাপী।

আবার তার বিপরীত চরিত্রের মানুষও আছে। নটর ডেম কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিমই সেই রকম একজন শিক্ষক! এই শিক্ষকের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। পড়াশোনা করেছেন নটর ডেম প্রথমে কলেজে এবং এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। নটর ডেম কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ হামিম সম্প্রতি ডেঙ্গুসহ নানা গুরুতর জটিলতা নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে। গতকাল একপর্যায়ে সে তার বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে তার কিছু ইচ্ছের কথা জানায়। কয়েকটি ইচ্ছের মধ্যে অন্যতম একটি ইচ্ছে হলো সে তার প্রিয় রেজা স্যারের সাথে 'অন্তত একবার হাত মেলানো। এই ইচ্ছা পোষণ করে সবাইকে বিশেষ করে সাবেক-বর্তমান নটরডেমিয়ানদেরকে আবেগে আপ্লুত করেছে।

সমস্যা হলো শিক্ষক রেজাউল করিমরা সংখ্যায় এতই কম যে এই শিক্ষকরা এখন বিলুপ্তির পথে। আর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলই দেশের নানা স্কুল কলেজের প্রতিনিধিত্ব করেন। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে এরকম মানুষেরা জেঁকে বসেছে আছেন। রাজনৈতিক নিয়োগ আর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুরো বাংলাদেশের স্কুল কলেজ এইরকম মানুষ দিয়েই পূর্ন। এই স্কুলকে বরং বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সেরা স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই স্কুলের অবস্থাই যদি এমন হয় তাহলে নিশ্চই আঁচ করতে পারছেন গ্রামগঞ্জের স্কুলের কি অবস্থা। মফস্বলের স্কুলের অবস্থা খারাপ বলেই সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্বচ্ছল পরিবারের কারো সন্তান আর গ্রামের স্কুলে পড়ে না।

স্কুল কলেজের শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের উপর সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আসে তখন শিক্ষার্থীরা প্রায় matured! এই বয়সের শিক্ষার্থীদের উপর ইমপ্যাক্ট ফেলার মত শিক্ষক আমাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বললেই চলে। এই ইমপ্যাক্ট তৈরির জন্যই স্টিভেন ওয়েনবের্গকে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস তাদের ফুটবল টিমের কোচের চেয়েও বেশি বেতন দিয়ে নিয়োগ দেয়। প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্ট করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস হয়। সেখানে সিনিয়র, academically sound শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নেওয়ানো হয়। এই ইম্যাক্টফুল শিক্ষকের জন্যই প্রফেসর এমেরিটাস শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ইমপ্যাক্ট ফেলানো কঠিন।

এই জন্যই আমি সব সময় বলি প্রাইমারি স্কুলে সবচেয়ে ভালো মানের ভালো বেতন দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এই ক্ষেত্রেই আমাদের মেগা প্রজেক্ট নিতে হবে। তারপর আমাদের হাই স্কুল ও কলেজের শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যত বেশি রেজাউল করিমের মত শিক্ষক নিয়োগ দিব ততই দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। ততই দেশে সৎ মানুষ তৈরী হবে। এর পরিবর্তে আমরা কি করছি? আমরা নিয়োগ দিচ্ছি কামরুন নাহার মুকুলের মত মাস্তান টাইপের শিক্ষক। সারা দেশে যে চোর ডাকাত দুর্নীতিবাজ দিয়ে ভরে গেছে এর কারণ এটাই। অনেক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগে এলাকার এমপি আর রাজনৌতিক নেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আমরা যখন স্কুল কলেজে পড়েছি তখন ম্যানেজিং বডি, গভর্নিং বডি, ট্রাস্টি বোর্ড ইত্যাদির নামই শুনিনি। স্কুল চলেছে প্রধানশিক্ষকের নেতৃত্বে, কলেজ চলেছে অধ্যক্ষের নেতৃত্বে যেখানে অন্য কারো কোন ভূমিকা ছিল না। কি দাপট দেখেছি আমাদের হেড মাস্টার আর প্রিন্সিপাল স্যারের। সেইসব এখন হারিয়ে গেছে। এখন শুনি এলাকার এমপি বা গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আসবে শুনলে কলেজের প্রিন্সিপাল তার শিক্ষকদের নিয়ে কলেজ গেটে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। যতদিন এই অবস্থার অবসান না হবে ততদিন শিক্ষার মানের উন্নতি হবে না।

প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর মর্যাদা দিয়ে সভ্য দেশ তৈরী করা অসম্ভব। দেশ যারা চালায় তারা হয়ত সভ্য দেশ তৈরিই করতে চায় না। সভ্য দেশ হতে হলে শিক্ষিত ও সভ্য মানুষ তৈরী করতে হবে। দেশে যতবেশি শিক্ষিত ও সভ্য মানুষ হবে তত সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে ভোগ বিলাস করা কঠিন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়