নিউজ ডেস্ক: ফেনী নদীর মিরসরাই-সোনাগাজী অংশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৪ সালে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। বাঁধ নির্মাণের ফলাফল হিসেবে বাঁধের দুই পাশে কয়েক হাজার একর চর জেগে ওঠে। জেগে ওঠা এ চর আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় স্থানীয় মৎস্যচাষীদের কাছে। ধীরে ধীরে মুহুরী প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় গড়ে ওঠে পরিকল্পিত মৎস্য প্রকল্প। কেবল স্থানীয়রাই নয়, সেখানে বিনিয়োগ করে দেশের নামিদামি শিল্প গ্রুপগুলো। সূত্র: বণিক বার্তা
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার প্রায় ছয় হাজার একর জমিতে বছরে প্রায় ৪২ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে পাঙাশ, কার্প, তেলাপিয়া, পাবদা, শিং ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কার্প জাতীয় মাছ। এখানে বছরে ২২ হাজার টন কার্প জাতীয় মাছ চাষ হয়। প্রতি কেজি গড়ে ২০০ টাকা দরে যার আনুমানিক মূল্য ৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া তেলাপিয়া চাষ হয় নয় হাজার টন, যার মোট আনুমানিক মূল্য ৯ কোটি টাকা। এছাড়া পাঙাশ, শিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয় প্রায় ১১ হাজার টন। প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি বছর মুহুরী মৎস্য প্রকল্পগুলোতে ৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত চার শতাধিক মানুষ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। শুধু তা-ই নয়, মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে খ্যাত মিরসরাইয়ে রয়েছে ২৯টি জেলে পাড়া। এসব জেলে পাড়ার হাজার হাজার মানুষও মাছ ধরে জীবন ধারণ করে থাকেন।
অন্যদিকে মাছ বেচাকেনার জন্য বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় গড়ে উঠেছে উত্তর চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ মাছের আড়ত। এ আড়তে দৈনিক অর্ধ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। যার সিংহভাগ আসে মুহুরী প্রজেক্ট থেকে। মিরসরাইয়ে বছরে মাছের চাহিদা নয় হাজার টনের মতো। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় উৎপাদিত মাছ নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রামেরও ৭০ ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ করে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁধ নির্মাণের পর অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে মাছ চাষ করলেও ১৯৯৬ সালে বেশ কয়েকজন মৎস্য চাষী আধুনিক পদ্ধতিতে ও বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর মেরিডিয়ান, বসুন্ধরা, আবুল খায়েরের মতো নামিদামি শিল্প গ্রুপ বাণিজ্যিকভাবে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় মাছ চাষ শুরু করে। শুধু চাষ নয় এখানে উৎপাদন হয় মনোসেক্স তেলাপিয়া জাতের মাছের পোনা, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় অবস্থিত মেরিডিয়ান হ্যাচারির ব্যবস্থাপক খাজা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, তাদের হ্যাচারিতে বছরে সাত-আট কোটি মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এসব পোনা সিলেট, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সন্দ্বীপসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ৫০ একর জমিতে বছরে প্রায় ৩৭০ টন তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ উৎপাদন করে মেরিডিয়ান গ্রুপ।
আনোয়ার এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হাজী আনোয়ার হোসেন জানান, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় তার ১৩০ একর মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে বছরে প্রায় এক হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে দিন দিন মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচের তুলনায় লাভ কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মিরসরাই উপজেলার মুহুরী মৎস্য প্রকল্প দেশের একটি স্বনামধন্য মাছ উৎপাদন ক্ষেত্র। এখানে ছয় হাজার একর প্রকল্পে বছরে প্রায় ৪২ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ করে মুহুরী প্রজেক্ট মৎস্য প্রকল্প। এখানে যারা মাছ চাষ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যেকোনো প্রয়োজনে যথাযথ সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।