সুমাইয়া ঐশী : [২] যুগ বদলাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তাধারা। এখন কেউ আর বাড়িতে নির্বিকার বসে থাকতে চায় না। প্রযুক্তির কল্যাণে সুযোগও তৈরি হয়েছে বিস্তর। তাই বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য খুলে গেছে বহুমুখী পথ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ হলো শিক্ষার্থী এবং গৃহিণী। তাদের বেশিরভাগই এখন ঝুঁকছে ই-কমার্স বা অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার দিকে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন বাড়ছে ভিন্ন-ভিন্ন ও নতুন ধরনের ব্যবসার আইডিয়া।
[৩] তাদের মধ্যে এমনই একজন হলেন জাহিদ হাসান জীম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি একজন শখের ঘটক। তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজ ‘জিম ম্যারেজ ব্যুরো’ এর মাধ্যমে এপর্যন্ত ২০-২২টি বিয়ে দিয়েছেন। পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ে প্রতি তার আয় হয় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে চলমান বিভিন্ন ব্যবসা রেখে কেনো তিনি এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জিম বলেন, মূলত শখের বশেই তিনি শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ঠাট্টা-মশকরাও শুনতে হয়েছে, সমর্থন ছিলো না পরিবার থেকেও। পরে এই পেশায় ধীরে ধীরে সাফল্য আসতে থাকলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কমতে থাকে। একই ভাবেই শখের বশে ঘটকালি শুরু করে এখন পুরোদমে এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারেক মাহমুদ। ‘পয়গম ম্যারেজ মিডিয়া’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও চালাচ্ছেন তারেক।
[৪] বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি পোষ্য যেমন কুকুর, বেড়াল বা নানা জাতের পাখি পোষার ঢল নেমেছে। বিদেশি পোষ্য কেনা-বেচা এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজও রয়েছে। তবে কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ক্রিস্টাল রহমান একটু ভিন্নভাবে শুরু করেছেন। তিনি এসব পোষ্যের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করছেন। তার ফেসবুক পেইজের নাম হলো ‘পাউস পেট শপ বিডি’। এর পাশাপাশি তিনি পার্সিয়ান বেড়াল নিয়ে কাজ করেন।
[৫] এছাড়া ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে বিক্রির মাধ্যমেও স্বাবলম্বী মরিয়ম খান মুক্তা। পাশাপাশি তিনি বাড়িতে তৈরি খাবারও পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন অফিস আদালতে। এমনই গরুর ভুঁড়ি রান্নার জন্য প্রস্তুত করে অনলাইনে বিক্রি করেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তানজিলা জামান। মাত্র ছয় মাসেই চার লাখ টাকা আয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই নারী।
[৬] এমনই স্বাবলম্বী হওয়ার একাধিক সফল গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের চারদিকে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) দেয়া তথ্যমতে, অনলাইনে ২০১৭ সালে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে করোনার মধ্যে লকডাউনে এই লেনদেন বেড়েছে আরো। ক্ষুদ্র এসব উদ্যোক্তাদের পরামর্শ বা নানাভাবে সহায়তার জন্য ওম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এবং উদ্যোক্তা হাটের মতো তৈরি হয়েছে একাধিক ফেসবুক গ্রুপ। এছাড়া এসব পণ্য ডেলিভারির জন্য পাঠাও ডেলিভারি, পিকমি, পেপার ফ্লাই, রেড এক্স ও ই-কুরিয়ারের মতো বহু থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানেরও উত্থান ঘটছে।
[৭] সব মিলিয়ে বলা চলে, এখন বাংলাদেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব উদ্যোক্তারা কোনো কাজকে ছোট মনে না করে, অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জিডিপিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে একটি উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। এই খাতকে আরো এগিয়ে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ দেশের কর্মক্ষেত্রে আনতে পারে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সম্পাদনা: মিনহাজুল আবেদীন।
আপনার মতামত লিখুন :