শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৫ জুলাই, ২০২১, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০২১, ১০:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সামাজিক শক্তি হলো সামাজিক পুঁজি, আসুন এই শক্তিটা বেশি করে ব্যবহার করি: ড. আতিউর রহমান

আমিরুল ইসলাম: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধ করার জন্য কঠোর বিধিনিষেধের সময় সমাজের সামর্থ্যবানদেরও আশেপাশে যারা বিপদে আছে, তাদের দিকে তাকাতে হবে। বাসা-বাড়িতে যারা কাজ করে, কঠোর লকডাউনের সময় বিকাশের মাধ্যমে তাদের বেতন পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। নিজের একটু কষ্ট হলেও অন্যের কষ্টটা বুঝতে হবে। সবাই মিলে কষ্টটা দূর করার চেষ্টা করলেই কেবল একটি শক্তিশালী জাতি গড়ে উঠবে। আমাদের সমাজে সেই শক্তিটা ছিলো এবং আশা করি এখনও সেটা আছে। আমাদের সমাজে সংকটকালে সামাজিক শক্তিগুলোর বিস্ফোরণ ঘটে। এটাকে সামাজিক পুঁজি বলা হয়। এই পুঁজি যতো ব্যবহার করবো সেটা ততোই বাড়ে। অর্থনৈতিক পুঁজি যতো ব্যবহার করা হয় সেটা ততো কমবে। সুতরাং যেই পুঁজি ব্যবহার করলে বাড়ে, আসুন না আমরা সেই পুঁজিটা বেশি করে ব্যবহার করি।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গেছে সেখানে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। করোনা সংক্রমণের এই সাইকেল ভাঙতে হলে কঠোর বিধিনিষিধে যেতেই হবে। শহরে এই কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা সম্ভব এবং সরকার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে সরকার অনেকটা সফলও হচ্ছে। শহরে কঠোর বিধিনিষেধ বেশ ভালোভাবে পালন করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস গ্রামে-গঞ্জে সবত্রই ছড়িয়ে গেছে। সেখানে শারীরিক দূরত্ব কতোটা বজায় রাখতে পারবে, সেটা চিন্তার বিষয়। তবে নিয়মিত মাস্ক পরলে এবং ভিড় এড়িয়ে চললে সংক্রমণের হার কম থাকে। বেশি করে টিকা দিতে পারলে সংক্রমণের হার কমে। আমাদের দেশে টিকা দেওয়ার হার এখন বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা টিকা পাচ্ছি। এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করতে হবে।

করোনা সংক্রমণ রোধের বিষয়টিকে একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমাদের নিতে হবে। টিকা দেওয়ার পরেও মাস্ক পড়তে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই জায়গাটিতে সরকার একা সবকিছু পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে মানুষকে ঘরে আটকানো সম্ভব হবে না। মানুষ নিজে যদি বাঁচতে না চায়, তাহলে তাদের বাঁচানো সম্ভব না। সেজন্য সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। পুরো সমাজের মানুষকে যুক্ত করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। মসজিদের ইমাম, মহল্লার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, তরুণ স্বেচ্ছাসেবক, ওয়ার্ড কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যারা কাজ করে, সংগঠক, যাদের কথা শুনলে বুঝতে পারবে এই কাজটা করা খুব জরুরি। তাই সবাই মিলে মানুষকে বোঝাতে হবে। সাময়িক সময়ের জন্য আপনাদের একটু কষ্ট করতে হবে। যেমন করেই হোক সংক্রমণের এই শৃঙ্খলটা ভাঙতেই হবে আমাদের। সরকারের সঙ্গে পুরো সমাজকে চেষ্টা করতে হবে।

আমাদের সমাজের ভেতরেও একটি শক্তি আছে। সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাই যদি আমরা নিয়ম-কানুন মানি তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সরকারকে আর কঠোর বিধিনিষিধের পথ বেছে নিতে হবে না। শহরের অনেক মানুষ এই কঠোর বিধিনিষিধের সময় কাজ পাবেন না। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতার সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে এই সুবিধা এখন প্রায় সবাইকে দেওয়া গেলেও শহরের মানুষকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শহরের গরিব মানুষদের খাদ্য কষ্ট হবে। এর জন্য সরকার যে হাঙ্গার হটলাইন খুলেছে, এটা যেন খুব ভালোভাবে কাজ করে। এখানে যারা খাবার চাইবে, তাদের কাছে নিশ্চিতভাবে খাবার পাঠাতে হবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের তৈরি হতে হবে। কারণ এই সংকট কতোদিন থাকবে, সেটা আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। করোনা সংকট চলে গেলেও নতুন করে আমাদের অর্থনীতি, সমাজকে পুনরুদ্ধার করার একটি রোডম্যাপ এখন থেকেই তৈরি করতে হবে। আমরা কোন দিক দিয়ে এগোবো। আমাদের কৃষি আমাদের স্বস্তির জায়গা। মানুষ গ্রামে গিয়ে মোটামুটিভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছে। কারণ আমাদের কৃষি খুব ভালো করছে। কৃষি আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে আগলে রাখছে। আরেকটি স্বস্তির জায়গা হলো আমাদের রেমিটেন্স। এই সংকটকালেও আমাদের রেমিটেন্স বাড়ছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা প্রবাসে আছেন, তারা আমাদের দুঃসময়েও টাকা পাঠাচ্ছেন।

প্রবাসী আয়ের সঙ্গে যেসব কর্মী দেশে এসে ফিরে এসে কষ্ট করছেন, তাদের কষ্ট দূর করবার জন্য সরকারকে চেষ্টা করতে হবে এবং ব্যক্তিখাতকেও চেষ্টা করতে হবে। তারা যেন আবার ফিরে যেতে পারে এবং তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেটা দেখতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ যেন উপকরভোগীরা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন, সেদিকেও সাহায্য করতে হতে পারে। গ্রামে-গঞ্জে এবং শহরে নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এই সংকট মোকাবেলা করবার জন্য। তাদের নানা পুঁজি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, বিপণন সহায়তা করে, ই-কমার্সে সুযোগ করে দিয়ে, ট্রেড লাইসেন্স করে দেওয়ার মতো সুযোগগুলো আমাদের বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে করে সবাই মিলে আমরা বাঁচতে পারি। এখানে তরুণদের একটি বড় ভ‚মিকা আছে। তরুণদের স্বেচ্চাসেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়