//ব্যবসা ছেড়ে নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী # ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ১০০ কোটি টাকা অনুদান ও ব্যবসা খাতের জন্য সহজ শর্তে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ চায় পুস্তক বিক্রেতা সমিতি//
নিউজ ডেস্ক: গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্ধপ্রায় শিক্ষা কার্যক্রমও। এ কারণে চাহিদা নেই বই, কলম, খাতাসহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রীর। ফলে শিক্ষা-উপকরণ বিক্রি করা ‘বইয়ের দোকানগুলো’র গত ১৬ মাস চলছে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে। কেউ কেউ এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেছেন। বইয়ের দোকান হয়েছে মুদির দোকান, ফলের দোকান। কেউ হয়েছেন নিঃস্ব। এ অবস্থা চলতে থাকলে বইয়ের দোকানগুলো স্থায়ীভাবেই হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
এ খাদের উদ্যোক্তা ও বিক্রেতাদের সংগঠন, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে দেশে একাডেমিক ও সৃজনশীল বই অবিক্রীত ১২ হাজার কোটি টাকার। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান দোকান ভাড়া, কমর্চারী বেতন ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত, এখন দিশেহারা। ইত্তেফাক
সংগঠনটির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের প্রকাশনা খাতকে বাঁচিয়ে রাখা বর্তমান বইবান্ধব সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্পসুদে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা আগে থেকে যারা ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেছেন, কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ায় আমাদের অধিকাংশ প্রকাশক ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ পুস্তক বিক্রেতারা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী বিধায় তাদের কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। অপরদিকে সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যে অনুদান ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতেও পুস্তক ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ নেই।
এদিকে পাঠ্যপুস্তক খাতের এসব ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা তাদের করুণ পরিস্থিতি তুলে সরকারের কাছে প্রণোদনা ও সহজ ঋণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এই সেক্টরের নেতারা। সংগঠনটির নেতারা ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন।
সরকারের কাছে তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের পুস্তক ব্যবসা খাতের জন্য কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকার সহজশর্ত ও স্বল্পসুদে ঋণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। যা যে কোনো তফসিলি ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পিকেএসএফ প্রভৃতির মাধ্যমে সমিতির পরামর্শ ও সহযোগিতায় বণ্টন ও প্রদান করা যেতে পারে। প্রায় ২৬ হাজার পুস্তক ব্যবসায়ী পরিবারের জন্য এককালীন অনুদান ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব হলো, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির মাধ্যমে এই অর্থ বিতরণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করতে একাডেমিক ও সৃজনশীল বই ক্রয়ের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানান তারা।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা এবং জেলা পর্যায়ের বইমেলায় প্রকাশক ও বিক্রেতাদের অংশগ্রহণ আর্থিক ক্ষতিকে আরো ক্ষত করেছে। আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েও প্রকাশক ও বিক্রেতাগণ এই মেলায় মূলত অংশ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে। মেলা উপলক্ষ্যে এ সময় জাতির পিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রায় ৩ হাজার বই প্রকাশ করেছিল সৃজনশীল প্রকাশকরা। কিন্তু বইমেলা শেষে এ প্রকাশক ও বিক্রেতারাই স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মেলায় লাভ দূরে থাকুক, কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণ খরচের সমপরিমাণ বিক্রিও হয়নি। সঙ্গত কারণেই বইমেলার শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বইমেলায় অনুত্পাদনশীল বিনিয়োগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ-সহযোগিতা এবং সরকারিভাবে ১০০ কোটি টাকার বই ক্রয়ের বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আমাদের একইসাথে বিস্মিত ও হতাশ করেছে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, আমাদের দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হবে। তার সঙ্গে ৬৪ জেলা থেকেও পুস্তক প্রকাশক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হবে। আমরা আশা করি, আমাদের যৌক্তিক দাবি প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন।
শ্যামল পাল আরো বলেন, শুধু বাংলাবাজার নয়, জেলা উপজেলা পর্যায়ের অর্ধেকের বেশি বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বই বিক্রি না হওয়ায় অনেকেই এই দোকানে চাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন বিক্রি করছে। কেউ বিক্রি করছে বিভিন্ন ধরনের ফল। এরকম নানা অসহায়ত্বের খবর প্রতিদিন আমাদের কাছে আসছে, যা সহ্য করার মতো নয়। এই সেক্টরকে বাঁচাতে প্রণোদনা এবং ঋণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
আপনার মতামত লিখুন :