সুজন কৈরী : [২] পবিত্র ঈদুল আযহা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কোরবানীর পশুর হাটগুলোর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ রাজধানীল সকল বিপনী বিতান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির টাকা লেনদেন ও পরিবহনে মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন, সকল লঞ্চ ও বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ডিএমপি।
[৩] ঈদের ছুটিতে শুধু পুলিশের ভরসায় নিরাপদ ভেবে খালি বাসায় টাকা-স্বর্ণের মতো মূল্যবান সম্পদ রেখে বাড়ি না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর লাখ লাখ বাসা শুধু পুলিশের পক্ষে পাহারা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই বাসা সুরক্ষিত আছে কি না তা চেক করা, যাওয়ার সময় নিরাপত্তারক্ষীকে বলে যাওয়া বা প্রতিবেশীকে বলে যাওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
[৪] ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফাঁকা বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ঈদের ছুটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ায় বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। যার ফলে চুরি-ডাকাতি, সম্পদহানির আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে আমরা কাজ করেছি, এ সময়ে একাধিক চোর-ডাকাত পার্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে নিজ বাড়ির নিরাপত্তার প্রাথমিক দায়িত্ব নিজেকেই পালন করতে হবে।
[৫] তিনি বলেন, ডিএমপির জনবল স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও ঈদের ছুটিতে পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যদি নিরাপত্তা সচেতনতাবোধ তৈরি হয় তাহলে পুলিশ এবং ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধ দমনে অনেক বেশি সফল হওয়া সম্ভব।
[৬] সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসন্ন ঈদে আপনার প্রতিষ্ঠান, বিপনিবিতান, আবাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিচের ডিএমপির দেওয়া বেশ কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি।
নির্দেশনাগুলো হলো-
[৭] নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, আবাসন, অ্যাপার্টমেন্ট, বিপনিবিতানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি জোরদার করা এবং যেকোনো ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা। সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি তদারক করার জন্য মার্কেট মালিক সমিতি, ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদির মাধ্যমে তদারকি কমিটি করা। ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে ওই কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যক্তিগত প্রাক-পরিচিতি পুলিশের মাধ্যমে যাচাই করার ব্যবস্থা করা।
[৮] প্রতিষ্ঠান, বিপনিবিতান, আবাসনে সিসিটিভি স্থাপন করা। সিসিটিভিসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকার বিষয়টি নিয়মিত নিশ্চিত করা।
[৯] সিসি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ধারণকৃত ভিডিও হার্ড ডিস্কে ঠিকমত রেকর্ড হচ্ছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করা। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে একটি অংশকে দায়িত্ব পালন করতে বলা। যাতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা যায়।
[১০] দায়িত্বরত গার্ড এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে নিকটস্থ থানা, সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ এবং পুলিশ কন্ট্রোলরুমের মোবাইল এবং ল্যান্ড ফোনের নম্বর রাখা। যাতে যেকোনো দুর্ঘটনা, অপরাধ সংঘটনের আশংকা তৈরি হলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করা।
[১১] স্বর্ণালংকার, দলিল, অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ হেফাজতে রাখা এবং তালাবদ্ধ করা। কাছের আত্মীয়-স্বজনের কাছে রাখা অথবা ব্যাংক লকারের সহায়তা নেওয়া।
[১২] বাসা ছাড়ার আগে রুমের দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করা। যেসব দরজা-জানালা দুর্বল অবস্থায় আছে তা মেরামতের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করা।বাসা ছাড়ার আগে ঢাকায় অবস্থান করা প্রতিবেশী বা পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বাসার প্রতি খেয়াল রাখতে অনুরোধ করা এবং ফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
[১৩] অনুমতি না নিয়ে কেউ যেন বাসায় প্রবেশ করতে না পারে এ বিষয়ে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে সতর্ক করা। নিরাপত্তাকর্মী না থাকলে আগন্তুকের পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে দরজা না খোলা।
[১৪] মহল্লা ও বাড়ির সামনে সন্দেহজনক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করা। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও
আপনার মতামত লিখুন :