শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০২১, ০২:১৮ রাত
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০২১, ০২:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শরিফুল হাসান: শিক্ষার্থী ও দেশের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক পথে রাখা খুব জরুরি

শরিফুল হাসান: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে হীরক রাজার কথা মনে পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক মিথ্যাচারের বিষয়টি কয়েকজন সিণ্ডিকেট সদস্য যেভাবে তুলে আনলেন তাতে প্রশ্ন জাগে, পদে বসলে কী বিবেক-নীতি নৈতিকতা সব বিসর্জন দিতে হয়? আচ্ছা এসব ঘটনা কি আমাদের মাননীয় উপাচার্য-রেজিস্ট্রারদের লজ্জিত করে না? একের পর এক মিথ্যা বলতে, স্বেচ্ছাচারিতা করতে খারাপ লাগে না? তারা না জাতির বিবেক? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দলাদলি নিয়ে প্রথম আলোয় একটা নিউজ পড়লাম। এসব খবর পড়লে মনে হয়, এই দেশে নানা অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তা-ব্যক্তিরা বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে। আর এক্ষেত্রে তো রীতিমতো নজির সৃষ্টি করলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। খবরে এমন অনেকগুলো উদাহরণ আছে।

ভাবেন একবার বিবেকে কতোটুকু পচন ধরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ফলাফলে একজন ১২তম স্থান আসে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই ভুল যারা করলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে কেন এই ভুল গণমাধ্যমে এলো সে কারণে সাংবাদিকতা বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলো। সেই শিক্ষকের দোষ কী শুনবেন? তিনি এই ভুলটা আবিষ্কার করেছিলেন এবং বিবেকের তাড়নায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। আরও নাটক আছে। এই সাংবাদিকতা বিভাগের আরেকজন সহকারী অধ্যাপক এর সাথে সাথে যা ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে রীতিমত গবেষনা হতে পারে। তার পদোন্নতি আটকে দেওয়ার যে কারণ বলা হচ্ছে সেটা তো রীতিমত হাস্যকর। টু রেজিস্ট্রারের বদলে টু হুম ইট মে কনসার্ন লেখার অপরাধে এই শাস্তি! তবে এই ঘটনার অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে আসছে সেটি আরও বিস্ময়কর। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আর রেজিস্ট্রারের দাবি, সিন্ডিকেটের ৮০তম সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অথচ সিন্ডিকেট সদস্যদের অনেকেই বলছেন, এ নিয়ে সেদিন কোনো আলোচনাই হয়নি। অন্যদিক সিন্ডিকেট হওয়ার আগেই কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিল করে তাকে প্রভাষক বানিয়ে দেন রেজিস্ট্রার। যেন তিনি আগেই জানেতন এমনটা হবে। এই রেজিস্ট্রার তো দেখি ভিসির চেয়েও শক্তিশালী।

ঘটনা প্রতিবাদে সিন্ডিকেটের একজন সদস্য যিনি আবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার উপস্থিতিতে সিন্ডিকেট বৈঠকে কোনো শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল বা স্থগিতের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর ‘টু রেজিস্ট্রার’ এর পরিবর্তে ‘টু হুম ইট মে কনসার্ন’ লিখলে কারও পদোন্নতি স্থগিত বা বাতিল হতে পারে না। আমার সামনে এমন হলে অবশ্যই আমি প্রতিবাদ করতাম।’

সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটে কাজী আনিছের পদোন্নতি হবে না পদাবনতি হবে এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আর আমি তিন দশক ধরে বিভিন্ন সিলেকশন কমিটিতে কাজ করছি। কোনো কাগজে ভুল থাকলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করে আনতে বলি। এ ধরনের ছোটখাটো বিষয়ে কাউকে এভাবে হয়রানি করা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমি অবাক হচ্ছি আসলে সেখানে কী হচ্ছে।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোষাধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলছেনে, ‘কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিল বা বা উনার সুযোগ সুবিধা কমানো হবে সিন্ডিকেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু কাগজটি ঠিক করে আনতে বলা হয়েছে।’ সমস্যা হলো নিজেদের ভুল স্বীকার না করে এই এক ঘটনা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রোজ নতুন নতুন কথা বলছে। সিন্ডেকেট সদস্যদের বিবৃতি গণমাধ্যমে আসার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ বলছে, কাজী আনিছের পদোন্নতির ব্যাপারে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেওয়া সিন্ডিকেট সদস্যদের বক্তব্য ‘অসম্পূর্ণ ও অর্ধসত্য’। অন্যদিকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বলছেন, তাদের বক্তব্য সত্য।

এজন্যই আমি বলি, মাঝে মধ্যে মনে হয় দেশটা মগের মুল্লুক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভিসি সেই মুল্লুকের হীরক রাজা। তবে কিছুটা আশার কথা হলো শতভাগ উপাচার্যই এখনো পচে যাননি। তাদের কেউ কেউ এখনো সত্য কথা বলার চেষ্টা করছেন। এই যেমন সদস্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের সরল স্বীকারোক্তি, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, সেখানে কথা না বলাই ভালো। কিন্তু কথা না বলে আর কতোদিন? এই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উপাচার্য যে স্বেচ্ছাচারিতা করেন তাতে চুপ করে থাকলে এই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে চললে একদিন উপাচার্য পদগুলোতে দেখবেন শিক্ষকদের বাইরে থাকা প্রশাসন চালানোর জন্য লোকজন আসছে। এর দায় কিন্তু এসব স্বেচ্ছাচারী উপাচার্যদের।

বলতে বাধ্য হচ্ছি, করোনার গত দেড়বছরে আমাদের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই সময়ে তারা কতো কী করতে পারতো! তাদের মধ্যে কী এই বোধগুলো কাজ করে না? নাকি অলস মস্তিষ্ককে তারা অন্য কাজে লাগাচ্ছেন? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি আর সেখানকার মহাপরাক্রমশালী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে বলবো, অনেক হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আপনাদের কারণে। নিজেদের জিজ্ঞাসা করেন তো সিন্ডিকেট সদস্যরা যা বলছেন তাতে নৈতিকভাবে আপনারা এই পদগুলোতে থাকার অধিকার রাখেন কিনা? আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিনদের যদি আপনারা শ্রদ্ধা না করেন, নিজেরা কীভাবে শ্রদ্ধা আশা করেন। সরকারকে বলবো, শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, এদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যসহ কিছু লোকের যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে সেগুলো থামান। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক পথে রাখা খুব জরুরি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়