শাহাবুদ্দিন ফারকী: ২১ বলে দরকার ২১ রান। যেকোন দলের সাথে খেলায় বাংলাদেশের যখন এমন দশা হয় তখন আমার বুকের ভেতর চাপ অনুভুত হয়। একটা দুটা চার ছয় না মারা পর্যন্ত সে চাপ বাড়তেই থাকে।গতকাল বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে ওডিআই এর যখন এমন দশা আমার বুকের চাপটাও বার্তা দেয়। ২০১১ তে যখন আমার হার্টের আর্টরিতে ব্লক ধরা পরল, ডাক্তার বললেন আপনার এনগেজমেন্ট হবে। আমি ভাবলাম আমাকে আনন্দ দিতে ডাক্তার আমার সাথে কৌতুক করছেন। উনি বললেন কৌতুক না মশাই, আপনার হার্টে রিং পরাতে হবে। আমার ছেলে বললো কিছুদিন সময় দিন। তারপর একটা কোর্স করালো। আল্লাহর অশেষ করুণায় আর ডাক্তারের কাছে যাইনি। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত অর্থাৎ নিজের উইলফোর্স, নিয়মিত শরীরচর্চা, মেডিটেশন, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, আর সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে নিয়মিত শোকর গুজার অনুস্মরণ করে খুউব ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।
যাহোক যা বলছিলাম। কাল যখন খেলার এমন চাপ চাপ উত্তেজনা, আমার স্ত্রী বললেন- মা’র অক্সিজেন লেভেলটা একটু মেপে দেখোতো। মা কেমন যেন নিশ্চুপ ঘুমিয়ে আছে। আমি বললাম- ঘুমালেতো সবাই নিশ্চুপই থাকে (যাদের নাক ডাকার অভ্যাস, তারা ছাড়া)। আমার স্ত্রী আমার হাতে অক্সিমিটারটা দিয়ে বললেন- তবুও একটু মেপে দেখ। আমি অক্সিমিটারটা আমার শাশুড়ীর তর্জনিতে পরালাম। দেখি অক্সিজেন স্যাচুরিয়েসন লেভেল মাত্র 26 আর পাল্স 29। আমার বুকের ভিতরে বিদ্যমান চাপটা আরো বেড়ে গেলো। আর এই অবস্থায় সাধারণত: আমার পাকস্থলিতেও চাপ বেড়ে যায়। অর্থাৎ আমাকে ওয়াসরুমে দৌড়াতেই হয়। যাহোক কোনভাবে নিজেকে সামলালাম। আমার শাশুড়ীর তন্দ্রালু ভাব ততক্ষণে কেটে গেছে।
আমার স্ত্রী তার মা’কে জিজ্ঞাসা করলেন- মা খারাপ লাগে? শ্বাস কস্ট হয়? আমার শাশুড়ী বললেন- আমার সমস্যা নেই, আমি ভালো আছি। মনে মনে বললাম- বলে কি, এই অবস্থায়ও বলে ভালো আছি! মনে মনে গনি ভাইর (যিনি আমাকে এই অক্সিমিটারটা দিয়েছিলেন) উপর খুব রাগ হলো, কি একটা নস্ট ডিভাইস উনি আমাকে দিয়েছেন, এই ভেবে। আমার স্ত্রী চশমাটি হাতে ধরিয়ে বললেন- আবার মাপো। আবার দেখি একই অবস্থা। দেখি অক্সিজেন স্যাচুরিয়েসন লেভেল মাত্র 26 আর পাল্স 29। এবার একটু শান্ত হয়ে ভালো করে তাকালাম। দেখি অক্সিজেন স্যাচুরিয়েসন লেভেল 26 নয়, ওটা 92 আর পাল্স 29 নয়, ওটা 62। এতক্ষণ চশমা ছারা বিপরীত দিক থেকে দেখছিলাম বলে এমন দৃষ্টিভ্রম, এমন নয়-ছয় অবস্থা। যাহোক মনে স্বস্তি ফিরে পেলাম। কিন্তু বুকের চাপটা তখনও যায়নি। তারাতারি টিভির সামনে এলাম। দেখি সাকিব ৪ মেরেছে। বুকের চাপটা নিমিষেই উধাও।
আপনার মতামত লিখুন :