শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২১, ০২:৩৫ রাত
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২১, ০২:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শামীম আহমেদ: ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মানুষ কেন করোনায় মারা যাচ্ছে?

শামীম আহমেদ: করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন দেবার পরও কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন, এই খবরে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন এমন অনেকেই উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, আবার যারা ভ্যাক্সিন নেননি, তাদের অনেকেই নতুন করে ভ্যাক্সিন নিতে চাচ্ছেন না। ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে এই যে আশঙ্কা, উৎকণ্ঠাÑ এটি যে শুধু বাংলাদেশিদের মধ্যেই তা নয়। সারা পৃথিবীতেই এ নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা চলছে, গবেষণা চলছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ভ্যাক্সিন কি আসলেই মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না? যদি ভ্যাক্সিন কার্যকরী হয়, তবুও কেন মানুষ মারা যাচ্ছেন?

[১] দুর্বল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা : ভ্যাক্সিন কারও কারও ক্ষেত্রে কাজ করছে, অন্যদের ক্ষেত্রে কাজ করছে না; আবার কিছু ভ্যাক্সিন একেবারেই কাজ করছে না, অন্য ভ্যাক্সিন পুরোদমে কাজ করছেÑ এই ধারণাগুলো মোটেও ঠিক নয়। আপনি যে ভ্যাক্সিনই নিয়ে থাকুন না কেন, সেটি যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত হয়, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা আপনাকে গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। ভ্যাক্সিন ভেদে ফাইজার ও মডার্নার করোনা ভাইরাস ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের ওপর এবং এস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্মা, এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের কার্যকারিতা ৬৫ শতাংশের আশেপাশে হলেও এই সবকটি ভ্যাক্সিনই মৃত্যু ঠেকাতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এরপরও ভ্যাক্সিন নিয়ে কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ ভ্যাক্সিনের দুটো ডোজ নেবার পরও মারা যাচ্ছেন কেন?

স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, দুটো বা একটি ডোজ নেবার পরও যারা মারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় সবারই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক কম। চলুন দেখে নেওয়া যাক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হবার কারণে কারা এবং কেন ভ্যাক্সিন নেবার পরও মারা যাচ্ছেন বা গুরুতরভাবে অসুস্থ হচ্ছেন বা হতে পারেন।

[২] দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত মানুষ : স্বাস্থ্য গবেষকরা করোনায় আক্রান্ত ও মৃত মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ভ্যাক্সিনের একটি বা দুটি ডোজ নেবার পরও যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই ঈযৎড়হরপ ওষষহবংং অথবা দীর্ঘমেয়াদী রোগশোকে ভুগছিলেন। এর মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ফুসফুসের জটিলতাজনিত রোগীদের মধ্যে ভ্যাক্সিন নেবার পরেও করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও হৃদরোগ, কিডনীর জটিলতায় আক্রান্ত কেউ কেউ ভ্যাক্সিন নেবার পরও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন।

[৩] অধিক বয়সী মানুষেরা বেশি ঝুঁকিতে : স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, যাদের বয়স বেশি তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে এবং তাদের আক্রান্ত হবার এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের চাইতে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুটো ভ্যাক্সিন নেবার পরও একজন ৮০ বছরের অধিক বয়সী মানুষের করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণের ঝুঁকি একজন ভ্যাক্সিন না নেওয়া ২০ বছরের তরুণের চাইতে বেশি।
কিছুদিন আগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইংল্যান্ডে দুটো ভ্যাক্সিন নেবার পরও যে ৫০ জন মানুষ মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৫০ বছরের অধিক। অর্থাৎ দুটো ভ্যাক্সিন নিয়ে ৫০ বছরের কম বয়সী কেউ ওই সময়কালে মৃত্যুবরণ করেননি।

[৪] ভ্যাক্সিন নেওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম : ভ্যাক্সিনেশন সাফল্যে বিশ্বে শীর্ষ দেশ ক্যানাডার ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভ্যাক্সিন নেওয়া মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে অন্তত এক ডোজ ভ্যাক্সিন নেওয়া ৯৫ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩২ জন মানুষ মারা গেছেন। মৃত ৩২ জনের বেশির ভাগের বয়স ৮০ বছরের অধিক এবং তাদের অন্যান্য গুরুতর রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ক্যানাডায় ৮০ বছরে পৌঁছে মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা যে পরিমাণ হ্রাস পায়; নানা কারণে আমাদের বাংলাদেশে অনেক ৫০ বছর বয়সী মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা একই মাত্রায় হ্রাস পায়। কানাডায় আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক ডোজ ভ্যাক্সিন নেওয়াদের মধ্যে প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ২ জন এবং দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নেওয়াদের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার জনে মাত্র ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যা অত্যন্ত কম এবং ভ্যাক্সিনের সফলতারই প্রমাণ। এখানে উল্লেখ্য, স্থান-কাল-পাত্র, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ভ্যাক্সিনের মান, ভ্যাক্সিন সংরক্ষণের মান এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর নির্ভর করে একেক দেশে এই মাত্রা একেক রকম হবে।

[৫] ভ্যাক্সিন নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ আর আক্রান্ত হচ্ছেন না, এটি খেয়াল রাখতে হবে : এটি খুব স্বাভাবিক যে ভ্যাক্সিন নেওয়া একজন মানুষও যদি মারা যান, তবে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ছি, ভ্যাক্সিনের মান নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছি, কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভ্যাক্সিন নেওয়া কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন করোনাভাইরাসে কাছাকাছি যাচ্ছেন, শরীরে নিচ্ছেন, কিন্তু ভ্যাক্সিন নেবার কারণে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মানুষ আর আক্রান্ত হচ্ছে না। আক্রান্ত না হবার বিষয়টি যেহেতু আমাদের চোখে পড়ে না, তাই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে আমরা সন্দিহান হই। করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। তারপরও কিছু মানুষ মারা যাচ্ছেন যেটি হতাশাব্যঞ্জক। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সতর্ক থাকতে, কিন্তু তবু কিছু মানুষ মারা যাবেন। আগামী দিনগুলোতে এই অবস্থায় আমাদের কী করণীয়?

১। মহামারীতে হার্ড-ইমিউনিটি হয় না, ভ্যাক্সিনই একমাত্র সমাধান : জনস্বাস্থ্যের খুব সাধারণ সূত্র হার্ড-ইমিউনিটি যাতে বলা হয় একটি লোকালয়ে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিলে বাকি ২০ শতাংশ মানুষকে আর দেওয়া লাগে না, কারণ তাদের আক্রান্ত করার জন্য কেউ বাকি থাকে না, এই সূত্র মহামারীতে কাজ করে না। বিশেষত ২০২১ সাল, যখন বিশ্বের প্রতিটি দেশ একে অপরের সাথে খুবই ঘনিষ্টভাবে অর্থনৈতিকভাবে সংযুক্ত সেখানে হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। দয়া করে হার্ড ইমিউনিটির অপেক্ষায় থেকে নিজের জীবনকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলবেন না। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতো বেশি সম্ভব মানুষকে ভ্যাক্সিনেসনের আওতায় আনা। আপনি সুযোগ পাওয়া মাত্রই ভ্যাক্সিন নিন এবং আপনার চেনা-জানা সবাইকে ভ্যাক্সিন নিতে উৎসাহিত করুন।

২। প্রবীণ এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত যেকোনো বয়সী মানুষকে সাবধানে রাখুন : যেকোনো বয়সের মানুষ যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং ফুসফুসে প্রদাহ আছে, তাদের আগেভাগে ভ্যাক্সিন দিন এবং যতোটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা থেকে সতর্ক রাখুন। এই রোগগুলো নেই অথচ অন্যান্য রোগ আছে এবং বয়স ৬০ এর অধিক তাদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্চনীয়, অন্তত দেশের বেশির ভাগ মানুষ ভ্যাক্সিনের আওতায় চলে আসার আগ পর্যন্ত।

৩। দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে মাস্ক পরুন : আপনার সঙ্গে একই বাসায় বসবাস করে না এমন মানুষের সাথে যখন ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কথা-বার্তা বলা সম্ভব না, সেখানে অবশ্যই মাস্ক পরুন। মাস্ক নাক ও মুখ ঢেকে পরুন। উন্মুক্ত জায়গা, যেখানে অন্য মানুষের শরীর ও শ্বাস-প্রশ্বাস অবধারিত, সেখানে কিছু স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে নিন এবং নিজের মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
সার্বিকভাবে মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন। যে জিনিস আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, যেমন কোরবানির বাজারের যৌক্তিকতা অথবা লকডাউনের সময়কাল নির্ধারণ করা, সেইসব বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করে, উস্মা প্রকাশ করে, উচ্চ-রক্তচাপ বাড়িয়ে করোনায় হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াবেন না। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। পরনিন্দা থেকে দূরে থাকুন এবং সুস্থ বিনোদন উপভোগ করুন। লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়