শাহীন খন্দকার: [২] দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়। টিকার স্বল্পতার কারণে আড়াই মাস ধরে টিকাদান চলার পর ২৫ এপ্রিল সরকার প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। সপ্তাহখানেক পর একই কারণে সারাদেশের সবগুলো কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই মাস সাত দিন বন্ধ থাকার পর ১ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
[৩] এখন পর্যন্ত ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই তিন দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে টিকা এসেছে, ২১শে জানুয়ারি উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিয়েছিল ভারত। ২৫ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির প্রথম চালানের ৫০ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেশে আসে। ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছে। ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছে ভারতীয় উপহারের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১২ লাখ ভ্যাকসিন।
[৪] এছাড়া ৮ এপ্রিল ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে ঢাকায় বাংলাদেশের (তৎকালীন) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে ১ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন। ১২ মে চীন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে প্রথম দফায় ৫ লাখ সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দিয়েছে। ৩১ মে দেশে এসে পৌঁছায় টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা ফাইজার বায়োএনটেক কোভিড-১৯ এর ১ লাখ ৬২০ ডোজ। ১৩ জুন চীন থেকে সিনোফার্মের ৬ লাখ উপহারের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় চালান ঢাকায় এসেছে।
[৫] ২ জুলাই রাত ১১টা ২২ মিনিটে টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের উপহার মডার্নার ১৩ লাখ করোনার ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়। ৩ জুলাই রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা ১১ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছায়। ৩ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দ্বিতীয় ধাপে চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা ৯ লাখ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছায়। ৩ জুলাই সকাল পৌনে ৯টায় টিকার অন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের উপহার মডার্নার তৈরি প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসে।
[৬] এদিকে চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ ১৭ জুলাই রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকায় এসেছে। চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ ১৮ জুলাই ভোররাত ৩টার দিকে ঢাকায় এসেছে। ১৯ জুলাই দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্র টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে আরও ৩০ লাখ মডার্নার ভ্যাকসিন উপহার দেবে বলে (১৭ জুলাই) জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার।
[৭] এছাড়া, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে জানানো হয়, জাপান কোভ্যাক্স এর মাধ্যমে ২৯ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দেবে। চীনের সরকার আরো ১০ লাখ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে দেবে। আগস্ট মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দশ লাখ এবং কোভ্যাক্স এর অধীনে আরো ৬০ লাখ ২০ হাজার ভ্যাকসিন আসবে।
[৮] এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট ৩ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দেয়ার কথা ছিল ভারতের (বিশ্বের বৃহত্তম) টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছিল। কিন্তু নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়া সেরাম চুক্তি অনুযায়ী ৩ কোটির স্থলে এ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৭০ লাখ ডোজ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। ১৮ জুলাই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী অবশ্য বলেছেন, টিকা সরবরাহের অবস্থা কী, সেটি জানার জন্য তিনি ভারতে যাচ্ছেন। যদি ভারতে জোগান বেড়ে থাকে, তাহলে চেষ্টা থাকবে দ্রুত বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার।
[৯] এদিকে, ভ্যাকসিনের জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে ১২ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিশ্চিত করলেও কবে-কোথায় এ চুক্তি হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। এর আগে জানা গিয়েছিল, চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন স্পুটনিক- ফাইভ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এমন খবর অনেকদিন ধরেই শোনা গেলেও এখনো সুনির্দিষ্টভাবে তেমন কিছু জানা যায় নি। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভ ৬ জুন বলেছিলেন, এই (চুক্তি) প্রায় হয়ে গেছে এবং ভালো মতোই হবে। এটা খুব দ্রুতই হবে। আর ৬ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া থেকে টিকা কেনার সবরকম প্রস্তুতি আমাদের শেষ হয়েছে। এই মাসের মধ্যেই একটা খবর হয়ত আমরা পেতে পারি। আমরা অপেক্ষায় আছি তারা কখন এবং কী পরিমাণ টিকা দেবে। দেশে এ পর্যন্ত যথাক্রমে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুটনিক-ভি, সিনোফার্ম, ফাইজার, সিনোভ্যাক এবং মডার্নার টিকার অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।